
মোঃ ইব্রাহীম খলিল তুহনি, রংপুর প্রতিনিধি
রংপুরের পীরগঞ্জে একই বিদ্যালয়ের ৩৭ ছাত্রীকে চিকিৎসা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধাপে ধাপে ওই সকল ছাত্রীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর কালসারডারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হবিবর রহমান সরকার জানান, মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণির তহমিনা ও বিথী, ৭ম শ্রেণির নুপুর, ৮ম শ্রেণির রিপা ও পুর্ণিমা, ৯ম শ্রেণির কল্পনা, ১০ম শ্রেণির নুরজাহান অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এদের দ্রুত গতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রী সহপাঠিদের দেখতে হাতপাতালে আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ৫জনকে ছেড়ে দিলেও ২জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয় ছুটির পরে পড়ন্ত বিকেলে আরও ৭জন ছাত্রী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ৮টার পর সহপাঠিদের দেখতে আসা ছাত্রী ধাপে ধাপে অসুস্থ অনুভব করলে গভীর রাত পর্যন্ত ৩৭জন ছাত্রীকে চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে মোট ৩৩২ জন ছাত্রী রয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ডিউটিরত মেডিকেল অফিসার বকুল চন্দ্র জানান, বিকেল থেকে ধাপে ধাপে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হাসপাতালে আসতে থাকে। এদের মধ্য অধিকাংশ ছাত্রী মাথা ব্যাথা ও বুকে জালার কথা বললেও কয়েকজন শ্বাসকস্টের কথা জানান। চিকিৎসা নেয়া ছাত্রীদের মধ্য ৬ষ্ঠ শ্রেণির আখিতারা, তানিয়া, বিথী, তহমিনা, মরিয়ম, ৭ম শ্রেণীর সুমনা, রিনা, রিয়া মনি, মিলি, নুপুর, মেশকাতুন, নুরনাহার, ফারাজানা, ৮ম শ্রেণির রিক্তা, রিপা, সুফিয়া, পুর্ণিমা, ৯ম শ্রেণির নুরজাহান, কল্পনা, ১০ম শ্রেণির উম্মে হাবিবা, নুসরাত, লিমা, নুরমনি ও রিতুকে ভর্তি করে অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক জানান, স্কুলের ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্য একটি ইট ভাটা রয়েছে। এছাড়াও স্কুলের অতি নিকটবর্তী সম্প্রতি একটি হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। প্রায়ই খামারে ওষুধ স্প্রে করা হয়। ইটভাটা ও খামারের কারনে পরিবেশ প্রতিনিয়ত ভারসাম্য হারাচ্ছে।উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ সৈয়দ মোহাম্মদ ইমরান জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রী অসুস্থ্য’র খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। বিদ্যালয় ও আশে পাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিষাক্ত কোন গ্যাসে এ ঘটনা ঘটেনি তা নিশ্চিত হয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বুলেট জানান, অধিকাংশ ছাত্রীরা সকালে বাড়ি থেকে খাবার খেয়ে বিদ্যালয়ে আসে, দীর্ঘসময় খাবার পেটে না পড়লে আবার বিদ্যালয়ে ঝাল-মুড়ি বা চানাচুর জাতীয় খাবার খেলে পেটে গ্যাস/এসিড হতে পারে। এক সাথে এতো সংখ্যক ছাত্রী অসুস্থ্য এটা মাস সাইকোজেনিক ইলনেস। অতিরিক্ত ভীতি বা আতংকের কারনে ঘটেছে। এর আগেও দেশের অনেক স্থানে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনি সন্তানদের অভয় দিয়ে অভিভাবকদের সচেতন সর্তক থাকার পরামর্শ দেন।তিনি আরও জানান, ৩৭ জনের মধ্যে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত ৪ জন ছাত্রী হাসপাতালে রয়েছে এবং ওরা সুস্থ্য আছে।