মমতাজ সাথী,গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের সমাধি ভরে উঠল ফুলেল শ্রদ্ধায়। শুক্রবার তার সপ্তম প্রয়াণ দিবসে সকাল থেকেই সমাধিস্থল আসতে থাকেন হিমু, মিসির আলী, শুভ্র, রূপাসহ ভক্ত অনুরাগী, লেখক প্রকাশক আর নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নুহাশ পল্লীতে বাড়তে থাকে ভক্তকূলের ভিড়। সকাল থেকেই নুহাশপল্লীর বৃষ্টি বিলাসে চলতে থাকে বিশেষ প্রার্থনা, কোরআনখানী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের ভাই রম্যলেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, তার স্ত্রী আফরোজা আমিন, বোন সুফিয়া হায়দার, রোকসানা আহমেদসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য নুহাশ পল্লীর কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা ও বিশেষ দোয়া করেন। হুমায়ূন আহমেদের শ্বশুর প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলীও সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই ছেলে নিশান ও নিনিদ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় মৃত্যু বার্ষিকীতে নুহাশপল্লীতে আসতে পারেননি। শাওনের বাবা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, শাওন চলচ্চিত্র বিষয়ক ৬ মাসব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ নিতে নিশাদ ও নিনিদকে সঙ্গে নিয়ে গত মে মাসে আমেরিকা গেছে। এজন্য তারা এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারেনি। তবে শাওন নিউইয়র্কে স্বামীর একটি স্মরণ সভায় যোগ দেবে।প্রিয় লেখকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশপল্লীতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রকাশক ও অন্য প্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলামসহ বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রায় ৫০ জন সদস্য।মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত ছয় বছরে এক মুহূর্তের জন্যও হুমায়ূন আহমেদকে ভুলে থাকতে পারিনি। নুহাশপল্লীতে এলেই স্মৃতিগুলো আরো বেশি তাড়িত করে। আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে পারিবারিকভাবে একটি মিউজিয়াম স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তাকে নিয়ে একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গবেষণা করছেন। এ আর্কাইভ গবেষণা কাজে সহায়তা করবে।হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্টি চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবি পরিহিত হিমু আর নীল শাড়ির রূপারা সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। ঢাকা, ফরিদপুর, নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে ৬০ জন হিমু নুহাশ পল্লীর কর্মসূচিতে যোগ দেন।নুহাশ পল্লীর ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, আশেপাশের এলাকার ৮টি এতিমখানা মাদরাসার প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী সকাল থেকে জোহর নামাজের আগ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত করেন। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের পর এতিমখানার শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত সহস্রাধিক মানুষকে খাবার পরিবেশন করা হয়।
ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে আক্ষেপ : মৃত্যুর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও শুরু করা সম্ভব হয়নি বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদের দেখা স্বপ্নের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাজ। নানা রকম সীমাবদ্ধতার কারণে এখনও পূরণ হয়নি হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার স্বপ্ন। এককভাবে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা খুব সহজ নয়- সে কথা বললেন আহসান হাবীব। তিনি সমকালকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ জীবনে যে স্বপ্নই দেখেছেন সেটাই পূরণ করেছেন। কোনো স্বপ্নই অপূর্ণ রাখেননি। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দেখা স্বপ্নটা পূরণ করে যেতে পারেননি। একটি ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন হুমায়ূন আহমেদ। তার অবর্তমানে এমন একটি বড় কাজ করা সহজ নয়। আর জীবনের সব স্বপ্নই যে পূরণ হতে হবে এমন কথা তো নেই। তবে ভাইয়ের স্বপ্নটা পূরণ করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম বলেন, জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিলে হুমায়ূন আহমেদের শেষ স্বপ্নটা বাস্তবে রূপ পাবে। সরকার চাইলে কাজটি খুব সহজে হতে পারে।