শুক্রবার , মার্চ ১৭ ২০২৩
Home / জাতীয় / মুন সিনেমা হল নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব মালিক পক্ষের **

মুন সিনেমা হল নিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব মালিক পক্ষের **

নাদিরা খানম তুলি

পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট এলাকার মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে সরকারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে মালিকপক্ষ। ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানি তাদের প্রস্তাবে সম্পত্তির মূল্য বাবদ প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওয়ার পর মুন সিনেমা হল, সম্পত্তির মালিকানা ও অধিকার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নামে দেওয়ার কথা বলেছে। রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে ওই প্রস্তাব মৌখিকভাবে তুলে ধরা হয়। পরে আদালত আগামী ২২ আগস্ট এই অঙ্গীকারনামা (অ্যাফিডেবিট) লিখিতভাবে দাখিলের দিন নির্ধারণ করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। মুন সিনেমা হলটি ছিল পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে, যার মূল মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হয়। পরে শিল্প মন্ত্রণালয় ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করে। ইতালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলেও বিষয়টি আটকে যায়। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের একটি সামরিক ফরমানে ঘোষণা করা হয়, সরকার কোনো সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মুন সিনেমা হলের সম্পত্তিও এর আওতায় পড়ে যায়। এরপর ২০০০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস। রিটে সংবিধানের ওই পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান বহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন এবং ৯০ দিনের মধ্যে মুন সিনেমা হল ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেডকে ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন। এরপর দীর্ঘ দিনেও মালিকানা ফিরে না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি তখনকার ভূমিসচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করে ইতালিয়ান মার্বেল কর্তৃপক্ষ। ওই অভিযোগের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ১৯৭২ সালে মুন সিনেমা হল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০১ সালে প্রতীকী মূল্য ১ টাকা দরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তা ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর কর। ডেভেলপাররা মূল সিনেমা হলটি ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে এবং নিজেদের অংশ বর্তমান দোকান মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে মত দেন, মুন সিনেমা হল আগের অবস্থায় ফেরত দেওয়ার কোনো উপায় না থাকায় জমির মূল্য ও মুন সিনেমা হলের মূল কাঠামোর মূল্য ধরে এর মালিককে দেওয়া যেতে পারে। ওই শুনানির পর আপিল বিভাগ সিনেমা হলের জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণের জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়। তিনি মুন সিনেমা হল ও এর জায়গার মূল্য ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেন। সেই প্রতিবেদন অনুসারে মুন সিনেমা হল মালিককে ৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

About admin

Check Also

কোভিডের তৃতীয় ও চুতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়া সাময়িক বন্ধ

দেশে কোভিডের মজুতকৃত টিকার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তৃতীয় ও চুতুর্থ ডোজ দেওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে …

বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতি করে বীমার অর্থের দাবিদারদের ব্যাপারে বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ …

সরকার স্মার্ট ক্রীড়াবিদ তৈরিতে কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার যে কোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *