কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালামসহ সাত ক্যাম্প ইনচার্জকে একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত দু’দিনে এ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এনজিওকে অনৈতিক সুবিধা ও রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩২টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। যাদের বেশিরভাগই এসেছে ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরুর পর। রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর অতিবাহিত হলেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। দিন যতই গড়াচ্ছে, ততই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের লোকজনও হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি গ্রুপ প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দেশি-বিদেশি কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে। তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে ক্যাম্পের প্রশাসন। কয়েকটি ক্যাম্প ইনচার্জের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। এ অবস্থায় গত রবি ও সোমবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামসহ সাত ক্যাম্প ইনচার্জকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে আবুল কালাম বলেন, ‘আজ (সোমবার) দুপুরে বদলির খবর পেয়েছি। সাতজন ক্যাম্প ইনচার্জকেও মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। নতুন কয়েকজনকে এখানে ন্যস্ত করা হয়েছে।’
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার হিসেবে যোগ দিচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক যুগ্ম সচিব মাহবুব আলম তালুকদার।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, উখিয়ার কুতুপালং ৪ ও ৫ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) শামিমুল হক পাভেলকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি রফতানি প্রকল্পের উপপরিচালক পদে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিশাল সমাবেশের অনুমতি দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সমাবেশের অনুমতি দিলেও বিষয়টি তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করেননি। সমাবেশে বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। এসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের সমাবেশ করার জন্য বিপুল অর্থও বরাদ্দ দিয়েছে। সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনবিরোধী বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনের হুমকি দেয়।
টেকনাফের নয়াপাড়া ১৪ ও ১৫ নম্বর ক্যাম্পের ইনচার্জ আবদুল ওয়াহাব রাশেদের বিরুদ্ধেও রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। এ কর্মকর্তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পের উপপরিচালক পদে বদলি করা হয়ছে। কুতুপালং ক্যাম্পের সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে গত ২২ আগস্ট জাদিমুরা ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ রোববার রাতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তবে এখনও আটক হয়নি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিরা। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ক্যাম্পে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ দাপিয়ে বেড়ালেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শরণার্থী শিবিরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানিয়েছে, ক্যাম্পের ভেতরে সেসব সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে উঠেছে, তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী তাদের বিপুল অর্থ দিচ্ছে; সরবরাহ করছে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র।