নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় অমরত্ব লাভ করেছে নুসরাত জাহান রাফি। গতকাল বৃহস্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেন। এ সময় আদালতে পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে আসে। আদালত বলেন, ‘নারীত্বের মর্যাদা রক্ষায় ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির তেজোদীপ্ত আত্মত্যাগ তাকে ইতোমধ্যে অমরত্ব দিয়েছে। এ অমরত্ব চিরকালের অনুপ্রেরণা। পাশাপাশি আসামিদের ঔদ্ধত্য কালান্তরে মানবতাকে লজ্জিত করবে নিশ্চয়। বিধায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই আসামিদের প্রাপ্য।’
রায়ে বিচারক আরও বলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ফেনী জেলার অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপীঠ। দুই হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়াশোনা করছে। এলাকার শিক্ষা সম্প্রসারণে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলোকোজ্জ্বল ভূমিকায় কালিমালিপ্তকারী এ ঘটনা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ সময় গণমাধ্যমের প্রশংসা করে আদালত বলেন, গণমাধ্যমে এ ঘটনা এভাবে প্রচার না পেলে জাতি এটা জানতে পারত না। একই সঙ্গে আদালত তদন্ত সংশ্নিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাশাপাশি তৎকালীন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের গাফিলতিকে কটাক্ষ করে সবাইকে ভবিৎষ্যতে সজাগ থাকতে সতর্ক করেন।
নুসরাত জাহান রাফিকে এ বছরের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাত। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ৩) এর ৪(১) ৩০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয় ১৬ আসামি। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। অনেককে মিছিল নিয়ে ফেনী শহর প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। আদালত চত্বর থেকে কেউ কেউ তাৎক্ষণিক বন্ধু বা স্বজনদের মোবাইল ফোনে রায়ের ফল জানান।