
চাকরির কারণে হবিগঞ্জ শহরে থাকতেন আলী মো. ইউছুফ। ছিলেন হবিগঞ্জ লিটল ফ্লাওয়ার কেজি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার স্ত্রী চিশতিয়া বেগম (২৫) রাঙ্গুনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স। তাদের ১৪ মাসের এক কন্যাসন্তান রয়েছে। জীবিকার কারণে স্বামী-স্ত্রী দু’জন দুই জেলায় থাকলেও মাসে অন্তত একবার স্ত্রীকে দেখতে যেতেন ইউসুফ। সোমবার রাতে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন তিনি। ট্রেনে ওঠার আগে স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, ‘সকালে দেখা হবে।’ কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস- সেই দেখা আর হলো না তাদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের ক্রসিংয়ে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নীশিথার মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ কেড়ে নেয় আলী মো. ইউছুফের জীবন। দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। খবর পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যান তার স্ত্রী চিশতিয়া।
লাশ নিতে স্বামীর চাচাতো ভাই উজ্জ্বল ও অন্যান্য আত্মীয়ের সঙ্গে ভোরেই ঘটনাস্থলে রওনা দেন তিনি। কসবা পৌঁছানোর পর থেকে একটা কথাও বলেননি চিশতিয়া। শোকে পাথর হয়ে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে এক মনে তাকিয়ে থাকছেন। চোখের পানিও যেন শুকিয়ে গেছে তার। স্বামীর লাশ বুঝে পাওয়ার পর একবার ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন। তারপর আবার নির্বাক।
উজ্জ্বল বলেন, এমন আচমকা বিপদে স্বামীর শোকে পাথর হয়ে গেছেন ভাবী। কারও সঙ্গেই কথা বলছেন। মেয়েটার কথা ভেবে কষ্ট লাগছে। আল্লাহতায়ালা যেন ভাবীকে শোক সইবার শক্তি দেন।

রাতেই রেল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। মঙ্গললবার সকালে যোগ দেন স্কাউট সদস্য ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ও রেলওয়ে থেকে চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।