শুক্রবার , মার্চ ২৯ ২০২৪
Home / জাতীয় / পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি: ১০ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ **

পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি: ১০ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ **

কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিশীল করার পেছনে দায়ী ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে তৎপরতা শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। বিশেষ করে যারা পেঁয়াজ মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সেই সব হোতাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রোববার সন্দেহভাজন বড় ১৪ আমদানিকারককে তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন (এনবিআর) শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তাদের মধ্যে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়। বাকিদের মঙ্গলবার ডাকা হচ্ছে।

সূত্র বলেছে, ব্যবসায়ীদের কাছে প্রধানত চারটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ১. কেজিপ্রতি পেয়াঁজের দাম। ২. কত দামে কার কাছে বিক্রি করা হয়। ৩. বিক্রির পরিমান। ৪. মজুদ কতো রয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে অপরাধীদের সহজেই শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। শুল্ক গোয়েন্দা অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্দেশ্য হচ্ছে মজুতদারদের খুঁজে বের করা। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কোনো ঘাটতি আছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা। এ জন্য আমদানিকারকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনে এনবিআরের চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে সহিদুল বলেন, মজুদদারদের চিহ্নিত করতে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আমদানিকারকদের দেওয়া তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে মজুতদারদের ধরা যাবে।

তিনি মনে করেন, মজুতদারদের ধরতে পারলে বাজোরে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে। এতে করে দাম কমবে। অচিরেই পেঁয়াজের দাম সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করেন শুল্ক গোয়েন্দার ডিজি।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাজার অস্থিশীল করার পেছনে দায়ী ব্যবসায়ীদের ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের একাধিক সংস্থা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ৪৭ জন বড় আমদানিকারদের একটি তালিকা তৈরি করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। গত তিন মাসে (আগস্ট ২০১৯ থেকে ১৮ নভেম্বর) আমদানি করা পেঁয়াজের তথ্যের ভিত্তিতে এ তালিকা তৈরি করা হয়। এ আমদানিকারকদের বেশিরভাগই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ এনেছে।

তবে আমদানিকারকরা বলেন, মূল্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত নন তারা। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পর স্থলবন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ খালাস হয়নি। তাছাড়া আমদানিকারকরা মজুদের সঙ্গে জড়িত নন। এলসি করে আনার পর বন্দরেই ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ বিক্রি করে দেন তারা। পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজির পেছনে এজেন্ট, পাইকারসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করেন তারা।

চাঁপাইানবাববগঞ্জের বিশাল এন্টারপ্রাইজের আব্দুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, আমদানিকারকদের পেঁয়াজ মজুতের সুযোগ নেই। শুল্ক স্টেশনে পেঁয়াজ খালাসের পর বন্দরেই বিক্রয় করা হয়। বিনিময়ে কমিশন পাই আমরা। পেঁয়াজের বাজারে সংকট তৈরির পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি দায়ী। একই জেলার নজরুল অ্যান্ড সন্সের শুক্কর আলী বলেন, কারসাজির সঙ্গে আমরা জড়িত নই।

একতা শস্য ভান্ডারের মনিরুল ইসলাম বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে বিশেষ ব্যবস্থায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দুই দিনের জন্য স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পেঁয়াজ খালাস হয়। ওই সময়ে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিপ্রতি গড়মূল্য ৭৩ টাকা ছিল।

সূত্র আরও জানায়, গত অর্থবছর ১১ লাখ ৩৭ হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়। এর আগের অর্থবছরে এ পরিমান ছিল ৯ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবরে এসেছে ২ লাখ ৫২ হাজার টন পেঁয়াজ। শুল্ক গোয়েন্দার ডিজি সহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পেয়েছে আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে। কারা এসব করছে তাদের চিহ্নিত করতে সন্দেহভাজন ৪৭ জনের আমদানিকারকের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাদের কাগজপত্র পরীক্ষা করলে মজুতের পরিমান বের করা যাবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রফতানি বন্ধ করার আগে ভারত থেকে যে সব পেঁয়াজ এসেছে সেগুলোর চালান পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানির আড়ালে দেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।

এ সময় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৯ সেপ্টম্বর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপর থেকে দেশে পেঁয়াজের সংকট সৃষ্টি হয়। যা, এখনও অব্যাহত আছে।

About admin

Check Also

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্রকে ভুমিকা নিতে হবে: বিএমএসএফ

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রকে ভুমিকা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক …

ঢাকায় ফিরলেন পিটার হাস

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কলম্বো থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। সোমবার (২৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় …

পেছাল প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

দ্বিতীয়বারের মতো পেছানো হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সহকারী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *