হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকের এ ঘটনায় মারা যাওয়া বিউটি আরা (৩৫) সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ উত্তর বংশিপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।
প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর পর ওই হাসপাতালে রোগীর স্বজনেরা চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ভাংচুর করেছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হযরত আলীর ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোরে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের লোকজন বিউটিকে শহরের এইচ কে মাদার কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভর্তি করান। পরে সকালে ওই প্রসূতির সিজার করান চিকিৎসক ডা. হযরত আলী। সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণ পরেই ছটফট করতে করতে মারা যান বিউটি আরা। পরে রোগীর স্বজনেরা কি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে তা জানতে চাইলে রোগীর ফাইলপত্র নিয়ে চলে যান স্টাফরা। এরপরই ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। নিহতের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার বোনকে ভর্তি করার পর অপারেশন করান ডা. হযরত আলী। ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। রোগীর সাথে কথাও বলা হয়, এ পর্যন্ত রোগী ভাল ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে রোগীকে একটি ইনজেকশন পুশ করার পরে ছটফট করে মারা যায়।’ ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। নিহতের আরেক বোন বিলকিস বেগম বলেন, ‘ইচ্ছা করেই রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে। ইনজেকশন দেয়ার পরপরই মারা যায়। কিন্তু কি ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সেটি দেখতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায়নি। রোগীর সাথে থাকা ফাইলটি গায়েব করে দেয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ডা. হযরত আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা কি লিখবেন লিখেন।’ কি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল এবং রোগীর ফাইলপত্র দেয়া হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্ন করা হলেও উত্তর দেননি তিনি। দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুছ কুদ্দুছ বলেন, এইচ কে মাদার কেয়ার হাসাপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের অনেক আগের অনুমোদন থাকলেও তার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। বারবার বলার পরও অনুমোদনের জন্য আবেদন কিংবা নবায়নের জন্য আবেদন করেননি কর্তৃপক্ষ। এর আগেও সেখানে রোগীর মৃত্যু হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে শোকজ করা হলেও সেই জবাবও সমুচিত দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। এ ব্যাপারে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বজলুর রশিদ বলেন, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাংচুরের সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ ঘটনায় থানায় এখনও কোন অভিযোগ দেয়নি রোগীর স্বজনেরা। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে পুলিশ সেখানে যাওয়ায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ অক্টোবর রাতে ওই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সদর উপজেলার ৩ নম্বর ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিরামপুর গ্রামের মুনতাহীনা পারভীন (২৫) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এই চিকিৎসকের দ্বার রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এবং অপারেশনের সময় কিডনি কেটে ফেলার অভিযোগও রয়েছে। অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর মামলায় তার ৯ বছর সাজাও হয়েছিল।