তুলোশী চক্রবর্তী,,,,,,,,,,,
ভারতীয় ঘড়িতে তখন রাত তিন টা বাজলো। গ্রামীণ সরকারি হাসপাতালে নাইট ডিউটির কর্মরত একজন নার্স, সব রোগিদের দেখাশোনা করছেন। অনেক আগেই তার নজরে পডেছিল একটি সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে বয়স পনেরোর একটি মেয়ে চুপচাপ বসে কি যেনো ভাবছে।মেয়েটির হাতে শাখা,পলা নেই ,কপালে বা সিঁথিতে সিন্দুর নেই ছিটেফোটাও,নার্স ভেবেই নিলেন মেয়েটি অবিবাহিত।কিন্তু সব রোগিদের সাথে একজন হলেও পরিবারের কেউ আছে,তবে রাত তিন টা পর্যন্ত লক্ষ করেও সেই মেয়েটির পাশে কাউকে দেখতে পেলো না।মেয়েটিও ঠায় একদৃষ্টে অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে আছে ।এবার নার্স ধীরে ধীরে গিয়ে মেয়েটির পাশে বসলো,নিঃশব্দ পরিবেশ বিরাজ করছে তখন,বেশিরভাগ রোগি ঘুমে অচেতন।
নার্স-এই শিশুর মা কে ?তুমি?
মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে বোঝালো শিশুটি তারই,
নার্স-তোমার সঙ্গে কে এসেছে?তাকে ডাকো।
মেয়েটি-কেউ নাই।
নার্স-নেই?এই শিশুর বাবা কোথায়?
মেয়েটি আবার চুপচাপ নিরুত্বর,চোখ থেকে অশ্রু বিন্দু বারছে।
বারংবার মেয়েটির শিশুর পিতার কথা জানতে চেষ্টা করার পর মেয়েটি ধিরে ধীরে বলতে শুরু করলো তার জীবনের সেইসব ঘটনার কথা,
তার বাবা বিদেশে কাজ করে ,বাড়িতে সে আর তার মা ও ছোটভাই থাকে।গ্রামের ধনী ব্যক্তি তথা রাজনৈতিক নেতার ছেলে টুপাই তাকে একদিন প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ে করবে এই প্রস্তাব দেয় তাকে, তখন সে সোজা না করে বসে,আর এটাও বলে দেয় তার সামনে মাধ্যমিক পরিক্ষা,টুপাই যেনো আর এসব বলে বিরক্ত না করে।
সপ্তাহখানিক পরে হঠাৎ একসময় স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তায় তার মুখ বেঁধে ফেলে,কিছু বোঝার আগেই তাকে গাডিতে করে এক জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং তার সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করে,শেষে অনেক কাকুতি মিনতি করার পর এক শর্তে মেয়েটিকে বাড়ির পৌছে দিয়ে যায়।শর্ত অনুযায়ী টুপাই এর কথা মত চলতে হবে তাকে,যখন যা বলবে তাই করতে হবে,অন্যথায় তার পরিবার সহ তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
সেদিন থেকে মেয়েটির পড়াশুনায় আর মন বসে না প্রায়ই চুপচাপ থাকে কাউকে কিছু বলার সাহস ও পায় না,আর এদিকে প্রায়ই টুপাই এর অত্যাচার সহ খারাব ব্যবহারের স্হীকার হতে হয় তাকে।কয়েকমাস যেতেই তার প্রায়ই বমি হয় ।ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে তার মা মেয়ের প্রেগ্নেসীর ব্যপারে জানতে পেরে জ্ঞান হারায় সেখানেই। সেদিন বাড়ি ফিরে সব জানতে চাইলে সে সেদিন তার মাকে সবটাই বলে।এদিকে তার মা এই বিষয়ে বিচার চেয়ে নেতার দারস্থ হলে নেতা তাদের অপমান সহ মিথ্যা রটানোর অপবাদে গ্রাম ছারা করে।মেয়েটি নেতার পায়ে ধরে বারবার ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়ায় এক শর্তে তার মা ও ভাই কে গ্রামে থাকার অনুমতি দেয়।শর্ত অনুযায়ী মেয়েটিকে তাদের সমাজ ত্যাগ করে আর মেয়ের সঙ্গে মায়ের কোনোরুপ যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করে।
এতুটুকু শুনেই নার্সের চোখ থেকেও টপ টপ করে জল পড়ছে আর তখনি মেয়েটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে,নার্স তার বাড়িতে নিয়ে যায় মেয়েটিকে, সেখানে সন্তান পালন সহ চলতে থাকে তার পড়াশুনা।
সাত বছর পড়াশুনায় মনোযোগের সহিত কঠোর শ্রম করে মেয়েটি উকিল হতে পারলো।এবং সব প্রমান জোগার করে নেতার ছেলেকে জেলে পাঠালো।
সময়ের সাথে সব বদলেছে,বদলে গেছে নেতার দাদাগিরি দেখানোর ক্ষমতা,ক্ষমতা না থাকায় কিছু করতে পারলো না টুপাই এর বাবা,যে সমাজ একদিন মেয়েটিকে ত্যাক করেছিল,এখন তাদের আপদে বিপদে সবসময় মেয়েটির কাছেই ভরসা।কারন মেয়েটি এখন প্রতিষ্ঠিত তাই সবাই তার গুন গায় আগের হওয়া সব অপরাধ আজ য়েনো ইতিহাস,এবার নববর্ষ উৎসব উপলক্ষে সবাই সেই মেয়েটিকে উৎসব উদ্বোধন এ আমন্তন করে,আর মেয়েটি নার্স টিকে নিয়ে মঞ্চে উপস্থীত হয়,নার্স এর বক্তব্য”এখনকার দিনে অধিকাংশ প্রেম ছলনাময়।যে ভালোবাসবে তা সে চিরদিনই বাসবে। চেচিয়ে চেচিয়ে ভালোবাসা প্রমান করা যায় না। ভালোবাসা হয় মনের মিল থেকে, সবচেয়ে বড় কথা হল-
শুধু একজন হৃদয়বান মানুষ ই পারে উন্নত মানুষ গড়ে তুলতে,হোক সে মাষ্টার বা ডাত্তার। আর হৃদয়হীনরাই সমাজ কে কুলুষীত তথা নরক করে তোলে। সব মেয়েদের তাই নিজে শিক্ষিত ও স্বাবলম্বি হওয়া দরকার।মেয়েরা শিক্ষিত হলে দেশের উন্নতি অনিবার্য।আজো বহু গৃহে মেয়ের থেকে ছেলেকে বেশি স্নেহ ভালোবাসা দেয়,মেয়ে কি শুধু নামমাত্র?এটা কখনো ভাববেন না।নিজের সমস্যা সমাধান নিজের করতে হবে এটা ঠিক,তবে গুরুজনদের পরামর্শ শ্রেয়।”