সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি যুদ্ধেও জয়ী হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অপমানের প্রতিবাদে সরকারি স্কুল বাদ ভর্তি হয়েছে বেসরকারি স্কুলে। যশোরের মনিরামপুরে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক মা-বাবার সামনে লিতুনকে বিদ্রুপ করে। এর প্রতিবাদে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে সে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। আর এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার লিতুনজিরার বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের প্রভাষক হাবিবুর রহমানের মেয়ে অদম্য মেধাবী লিতুন জিরার প্রবল ইচ্ছা ছিল মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ার। সে মোতাবেক ২৩ ডিসেম্বর মা-বাবার সঙ্গে হুইল চেয়ারে লিতুন সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসে। লিতুনের সিট পড়ে দোতলার একটি কক্ষে। লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান ও মা জাহানারা বেগম জানান, প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে উপরে উঠতে কষ্ট হওয়ায় তারা প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীকে অনুরোধ করেন নিচের যেকোন কক্ষে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে। এতে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী রেগে যান। এক পর্যায় প্রধান শিক্ষক লিতুনের সামনে তার মা-বাবার উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিবন্ধী মেয়েকে কোলে নিয়ে বস্তাভর্তি ধান যদি নাড়াচাড়া করা যায়, তাহলে তাকে নিয়ে উপরে উঠতে সমস্যা কোথায়? পঙ্গু মেয়ের জন্য পৃথক কক্ষে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। অন্য স্কুলে ভর্তি করার পরামর্শ দেন লিতুনের মা-বাবাকে। প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণে লিতুন ও তার বাবা-মা হতবাক হয়ে অঝরে কাঁদতে থাকেন। লিতুনের বাবা জানান, কোন উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত তারা দুজনে মিলে কষ্ট করে লিতুনকে দোতলায় পরীক্ষার কক্ষে বসিয়ে দেন। পরীক্ষা অংশ নিয়ে লিতুন মেধার স্বাক্ষরও রাখে। সে কৃতিত্বের সঙ্গে ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়।
লিতুন জিরা আক্ষেপ করে জানায়, প্রধান শিক্ষক যদি তার সঙ্গে এমন অসদাচরণ করেন, তাহলে সহপাঠীরা তার সঙ্গে কি আচরণ করবে? ফলে প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণের প্রতিবাদে লিতুনজিরা সরকারি স্কুলে ভর্তি না হয়ে উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজে ১ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার লিতুনজিরার বাড়িতে গিয়ে তার ও মা-বাবার প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় তারা প্রধান শিক্ষকের অসদাচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে লিতুনকে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তাব দেন। তবে লিতুন ও তার বাবা-মা এ প্রস্তাব প্রত্যখ্যান করে ওই প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেন।
তবে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী অভিযোগ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে দুঃখ প্রকাশ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরিফী জানান, অসদাচরণের জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে।