
ঊনসত্তর ডেস্কঃ
যৌনকর্মী- শব্দটি শুনলেই সমাজে সেই মানুষটিকে ভিন্ন চোখে দেখা হয়। শুধু তাই নয়, ঘৃণিত পেশা বলে মৃত্যুর পরও অবজ্ঞার শিকার তারা। কোনো যৌনকর্মী মারা গেলে তাকে দেওয়া হতো নদীতে ডুবিয়ে কিংবা মাটিচাপা। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রথা চলে আসছিল দীর্ঘকাল ধরে। তবে এবার সেই প্রথা ভাঙতে শুরু করেছে। রোববার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমানের উদ্যোগে শরিয়াহ অনুযায়ী এক যৌনকর্মীর জানাজাসহ দাফন সম্পন্ন হয়।
জানা যায়, দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার যৌনকর্মীর বসবাস। প্রথম দিকে এখানকার বাসিন্দাদের কারও মৃত্যু হলে নদীতে লাশ ডুবিয়ে দেওয়া হতো। কয়েক বছর আগে তাদের জন্য পল্লীর পাশে কবরস্থান করা হয়। তবে কাফন-জানাজা ছাড়াই লাশ মাটিচাপা দেওয়া হতো।
সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে মাদক, জোরপূর্বক দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রোববার বিকেলে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায় যৌনকর্মীদের সংগঠন অবহেলিত নারী ঐক্য এর আয়োজন করে। মতবিনিময় চলাকালেই মৃত্যুর খবর আসে পল্লীর প্রবীণ বাসিন্দা হামিদা বেগমের (৬৫)। সেখানেই পল্লীর বাসিন্দারা হামিদার জানাজাসহ দাফনের দাবি তোলেন। এ সময় ওসি আশিকুর রহমান তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ওই নারীর জানাজা, দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন। রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত জানাজায় ওসি ছাড়াও অংশ নেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল, ইউপি সদস্য আবদুল জলিল ফকির প্রমুখ। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন দৌলতদিয়া রেলওয়ে মসজিদের ইমাম মৌলভি গোলাম মোস্তফা।
এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য আবদুল জলিল ফকির জানান, অতীতে যৌনপল্লীর কেউ মারা গেলে জানাজা হতো না। কারণ, কেউ জানাজা পড়াতে রাজিই হতেন না। তাই বাধ্য হয়ে লাশ মাটিচাপা দেওয়া হতো। ওসি উদ্যোগ নেওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান বলেন, ‘এই জানাজার নামাজে ইমামতি করার জন্য ইমাম রাজি হচ্ছিলেন না। তার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মাসআলা জানতে চাইলে তিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই রাজি হন। সফলভাবে এই কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত। এখন থেকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রত্যেক বাসিন্দার জানাজা-দাফন নিশ্চিত করা হবে।