ঊনসত্তর ডেস্কঃ
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হলেও মাঝে মধ্যেই কথিত পীর বা কবিরাজের মাধ্যমে ‘চিকিৎসা’ করিয়ে থাকেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এমন খবর এলেও খোদ রাজধানীর মিরপুরেই এমন আস্তানা খুলে চিকিৎসার নামে অপকর্ম করে আসছিল মহিবুল ইসলাম মিজান ওরফে ফকির মজনু শাহ (৪৭) নামের এক ভণ্ড পীর। বাড়ি দখল করে আস্তানা বানিয়ে সেখানে নারীদের বন্দি রেখে সম্ভ্রমহানি করছিল সে। তার পুরো অপকর্মে সহযোগিতা করে আসছিল আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি।
রোববার পুলিশ মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা ওই আস্তানায় অভিযান চালালে ভণ্ড পীর ফকির মজনু শাহর অপকর্মের চিত্র বেরিয়ে আসে। আস্তানা থেকে বন্দি অবস্থায় দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। মজনু শাহ পালিয়ে গেলেও তার সহযোগী খাদেম আবদুর রহিমকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, তিন বছর আগে মধ্য পাইকপাড়ার একটি বাড়িতে আস্তানা গেড়েছিল মহিবুল ইসলাম মিজান। প্রথমে বাড়ির দোতলা ভাড়া নিয়ে সে কবিরাজি ও ঝাড়ফুঁক দিলেও হঠাৎ করে নিজেকে ফকির মজনু শাহ পীর বলে প্রচারণা চালায়। একপর্যায়ে পীরের প্রভাব খাটিয়ে মালিকের কাছ থেকে ভাড়া বাসাটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে বিভিন্ন তরুণী ও নারীদের সেখানে চিকিৎসার নামে বন্দি রেখে অপকর্ম শুরু করে।
মিরপুর থানা পুলিশ জানায়, রোববার এক নারী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন, গত ২৫ ডিসেম্বর তিনি তার তরুণী মেয়েকে শারীরিক সমস্যার কারণে মজনু শাহর আস্তানায় নিয়ে যান। তখন সে মেয়েকে রেখে যেতে বলে। এক মাস পর তাকে সুস্থ অবস্থায় নিয়ে যেতে বলে। গত ২৫ জানুয়ারি তিনি মেয়েকে ফেরত নিতে গেলে ‘পীর’ মজনু শাহ ও তার খাদেম রহিম মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয় না। তারা মেয়েকে পেতে হলে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না থাকায় তিনি ফিরে যান। রোববার আবারও মেয়েকে নিতে ওই আস্তানায় যান। ওই সময় পীরের খাদেম ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখায় এবং হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ওই নারী থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তার মেয়েকে উদ্ধার করে।
মিরপুর মডেল থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বলেন, ‘আস্তানাটিতে কথিত পীর ফকির মজনু শাহ ও তার খাদেম রহিম থাকত। তারা চিকিৎসার নামে বন্দি করে রাখত নারী ও তরুণীদের। এই চক্র নানাভাবে ধর্মের ভয় দেখিয়ে, নানা আশা পূরণের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের আটকে রাখত। মগজ ধোলাই দিয়ে দিনের পর দিন আস্তানায় আটকে রাখত তাদের। অভিযানের সময় দুই নারীকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
ওসি বলেন, গত তিন বছর ধরে এ ধরনের অপকর্ম করে আসছিল ভণ্ড পীর মজনু শাহ ও তার সহযোগী। তবে এর আগে কেউ অভিযোগ না করায় পুলিশও জানতে পারেনি। রোববার উদ্ধার করা দুই নারী এতটাই মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন, তারাও কোনো অভিযোগ করতে চান না। তবে উদ্ধার হওয়া এক নারীর অভিভাবক থানায় ভণ্ড পীর ও তার খাদেমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।