কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
আর্থিক অভাব-অনটন, সুতার দাম বৃৃদ্ধি, সঠিক দাম না পাওয়া, বৈদেশিক বাজার সৃষ্টি করতে না পারা, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে হারিয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।
চরাঞ্চলগুলোতে এখন আর সারিসারি তাঁতঘরের খটখট শব্দ শোনা যায় না। তাঁতগুলোর খটখট শব্দের নিস্তব্ধতা ও রাতের সুনসুন নীরবতা যেন কয়েক হাজার তাঁতির দীর্ঘশ্বাস। জীবিকা নির্বাহে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পুজিঁ হারিয়ে আজ ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে চলতে না পারায় গত ২০০৯ সালের পর থেকে রৌমারীতে প্রায় পাঁচ হাজার তাঁতকল (কুঠির) শিল্প বন্ধ করে কাজের সন্ধানে ছুটছে শহরগুলোতে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলায় তাঁতে উৎপাদিত বস্ত্র সামগ্রী লুঙ্গি, গামছা, চাদর এর কদর রয়েছে সারাদেশ জুড়ে। ৯ থেকে ১০ বছর আগেও রৌমারীতে তাঁত শিল্প ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সে সময় উপজেলায় ১২ থেকে ১৫ হাজার তাঁত চালু ছিল। প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার মালিক ও শ্রমিক তাঁতের কাজ করে বেশ সচ্ছলতার মধ্যে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে চালু তাঁতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার এবং তাঁত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার। তাঁত শিল্পের বেহাল দশা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এদের অনেকে জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে পেশা বদল করে দিনমজুর, রিক্সা-ভ্যান চালানো, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নানা পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন।
তাঁত শিল্প শ্রমিক আবু জাফর, কুদরত আলী, মজনু মিয়া, মুকুল মিয়া বলেন, এ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য আমাদের মালিকদের পুঁজি নেই। বাধ্য হয়ে পেশা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলা অনেক কঠিন। তাই ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছি।
তাঁত শিল্প স্বত্বাধিকারী আবু তালেব বলেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাঁত শিল্পের বিপর্যয় হচ্ছে। রং, সুতাসহ তাঁত উপকরণ ও মজুরীর মূল্যবৃদ্ধি পুঁজির অভাব। এ কারণে চাদর, লুঙ্গি ও গামছা উৎপাদন খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। এতে তাঁতের কাজে পুঁজি লাগছে অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত পুঁজি যোগান দিতে না পেরে আমাদের অনেক তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।
তাঁত শিল্প স্বত্বাধিকারী আরমান আলী বলেন, সূতাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম যে হারে বেড়েছে সে হারে বাড়েনি কাপড়ের দাম। ফলে তাঁতিদের লাভের পরিমাণ গেছে একেবারেই কমে। কোন কোন ক্ষেত্রে কাপড় লোকসান দিয়েও বিক্রি করতে হয়। এভাবে লোকসান দিয়ে কাপড় বিক্রি করতে গিয়ে তাঁতিদের পুজির টান পড়েছে।
তাঁত শিল্প স্বত্বাধিকারী অনেকে তারা আরও বলেন, সরকারীভাবে আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করতো তাহলে তাঁত শিল্প সুন্দরভাবে চালানো যেত এবং আমাদের বাপ দাদার পেশা বদলিয়ে দিন মজুরী বা অন্যান্য পেশায় শহরে যেতে হতো না। সরকারের কাছে দাবি যে ক’টি তাঁত আছে তাদেরকেও যদি সরকার সু-নজর দেয় এখনো সম্ভব সুন্দরভাবে তাঁত শিল্প গুলি চালানো।