শনিবার , এপ্রিল ২০ ২০২৪
Home / জাতীয় / আর কেরানি চাই না, চাই দেশগড়ার কারিগর

আর কেরানি চাই না, চাই দেশগড়ার কারিগর

১৯৭৩ সালের ১৫ মার্চ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক উৎসব মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার জন্য বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমন ধরনের গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন, যে শিক্ষায় সত্যিকার মানুষ গড়ার মাধ্যমে জাতিকে নতুন করে সংগঠিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে পারি।

আশা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, একমাত্র বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাই দ্রুত দেশগড়ার কাজে সহায়ক হতে পারে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, গত দুইশ’ বছরের ব্রিটিশ শাসনে এবং পঁচিশ বছরের পাকিস্তানি শাসনে এ দেশে কেরানি পয়দার শিক্ষা ছাড়া আর কিছুই হয় নাই। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থার যদি আমূল পরিবর্তন না হয়, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে যদি আমরা ভেঙ্গে-চুরে নতুন করে ঢেলে সাজাতে না পারি তাহলে এ দেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়।

এই প্রসঙ্গে শিক্ষা কমিশনের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, অতিসত্ত্বর শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রদানের জন্য তিনি কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, দেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, দেশ ও জাতির চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা স্মরণ রেখে কমিশন এমন একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করবেন, যার ফলশ্রুতি হিসেবে সমাজতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।

শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য কমিশনকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়নের ব্যাপারে কোন অসুবিধা বা সমস্যা দেখা দিলে তা দূর করার জন্য তিনি সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য সরকার আজ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, এই রিপোর্ট প্রণয়ন ত্বরান্বিত করার কাজে কমিশন কোন প্রচেষ্টারই ত্রুটি রাখবেন না।

বঙ্গবন্ধু বিগত স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের অপরিসীম ত্যাগের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ দাবি-দাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দেশের পাহাড় প্রমাণ সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করার আহবান জানান। তিনি বলেন, সরকার আজ হাজারো সমস্যার সম্মুখীন। গত দু শ’বছরের ব্রিটিশ শাসন আর পঁচিশ বছরের পাকিস্তানি কুশাসনের ফলশ্রতি হিসেবে সমস্ত সমস্যার বোঝা আজ বর্তমান সরকারের ঘাড়ে বর্তেছে।

আজ কেরানী চাই না, চাই দেশগড়ার কারিগর
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর সরকার সাধারণ শিক্ষার চেয়ে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি শিক্ষার উপর অনেক বেশি জোর দেবে। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষা শুধুমাত্র কেরানিরই জন্ম দিতে পারে। দেশের বর্তমান মুহূর্তে আমার কেরানির প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন আধুনিক বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত দেশ গড়ার কারিগর।

শিক্ষা কমিশন সবার মতামত দেবে
বঙ্গবন্ধু বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণয়ন সম্পর্কে ছাত্র, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি স্তরের জনগণের মতামত অবশ্যই নেবে। এই প্রসঙ্গে তিনি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, জনগণের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে শাসনতন্ত্রের ওপরও মতামত আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু দু’একটি চিঠি ছাড়া আমরা আর কোন মতামত পাই নাই।

দেশকে ভিক্ষুকের রাষ্ট্র করতে চাই না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই না। দেশের বর্তমান সমস্যা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিদেশি সাহায্যের আমার প্রয়োজন আছে। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে নয়, আত্মসম্মানের বিনিময়ে সাহায্য চাই না। বন্ধুত্বের বিনিময়ে যে সাহায্য তা আমরা অবশ্যই গ্রহণ করব।

বঙ্গবন্ধু বলেন, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, নিজের সমস্যা নিজে সমাধানের উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য আমাদের সর্বদাই সচেষ্ট থাকতে হবে। তিনি অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেন যে, যদি আজ আমরা নিজেরা দেশকে গড়ে তুলতে পারি তাহলেই সত্যিকার শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের আসবে। এই প্রসঙ্গে তিনি পারতঃপক্ষে বিদেশি শক্তি ও সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা প্রসঙ্গে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে বলেন, অত্যধিক পরনির্ভরতা জাতির জন্য শুধু ধ্বংসই ডেকে আনতে পারে।

তথ্যসূত্র: এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ। (গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর সেই সময়ের বক্তৃতা, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার নিয়ে রচিত)

About admin

Check Also

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্রকে ভুমিকা নিতে হবে: বিএমএসএফ

সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও স্বার্থ রক্ষায় রাষ্ট্রকে ভুমিকা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক …

ঢাকায় ফিরলেন পিটার হাস

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কলম্বো থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। সোমবার (২৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় …

পেছাল প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

দ্বিতীয়বারের মতো পেছানো হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সহকারী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *