
চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউ থেকে বের করে দেওয়া বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। মমতাজ জাহান নামে ওই নারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহে চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি।
গত মঙ্গলবার এ ঘটনার একপর্যায়ে মারা যান ওই নারী। শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে তার করোনা সনাক্ত হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ওই পরিবারে।
নিহত মমতাজ জাহান সীতাকুণ্ড পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড পন্থিছিলার চেয়ারম্যান বাড়ির রফিক আহমেদের স্ত্রী। মৃতের ছেলের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারদের অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে।
জ্বরে আক্রান্ত মমতাজ জাহানকে (৬৫) গত রোববার সীতাকুণ্ডে চিকিৎসা দিতে চেয়েও ক্লিনিকগুলোতে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে তার স্বামী রফিক আহমেদ ও ছেলে নাঈম আহমেদ তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর মেহেদীবাদে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাদের পরিবারের কেউ বিদেশ থেকে এসেছে কিনা, বাড়ির পাশে কেউ এসেছে কিনা? ইত্যাদি জেরা করার পর তাকে আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করান ডাক্তাররা।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চিকিৎসা করে ডাক্তাররা বেলা ১১টার দিকে জানান, জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্টের কারণে সবাই তাকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করছেন। এতে তারা ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে খবর দিলে ওইদিন বিকেলে কর্মকর্তারা এসে মমতাজ জাহানের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। পরে ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক আবু নাসের এসে বৃদ্ধার স্বামী ও ছেলেকে জানান, মমতাজ জাহানের করোনা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা সন্দেহ করছেন। তাকে আর এখানে রাখলে চিকিৎসকরা আইসিইউতে আসবেন না বলে জানিয়েছেন। তাকে আর আইসিইউতে রাখা সম্ভব হবে না। তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে।
এক পর্যায়ে বৃদ্ধার স্বজনদের কোনো আকুতি না শুনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পরিচালক ওই রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে নিয়ে আসেন। সেখানে আনার পর থেকে মমতাজ জাহানের অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে এবং এক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় তার মৃত্যু হয়। এদিকে তার মৃত্যুর পর হাসপাতালের নার্স থেকে শুরু করে কেউই মৃতদেহ স্পর্শ করেনি। এতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় স্বজনদের। তারপরও ৭৭ হাজার টাকা বিল দাবি করে কর্তৃপক্ষ। শেষে ৬৭ হাজার টাকা পরিশোধ করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। বুধবার বৃদ্ধার নিজ বাড়িতে তার লাশ দাফন হয়।
এদিকে শুক্রবার ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি থেকে ফোন করে জানানো হয়, বৃদ্ধা মমতাজ জাহানের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এতে তার স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
বৃদ্ধার ছেলে নাঈম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, লকডাউনের কারণে কোথাও চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মা অসুস্থ হওয়ার পর সীতাকু-ের কোনো চিকিৎসক না পেয়ে চট্টগ্রামের ন্যাশনাল হাসপাতালে অনেক অনুরোধ করে ভর্তি করাই। সেখানে তারা দুই তিন দিন চিকিৎসা দিয়ে হঠাৎ সন্দেহ করতে থাকেন আমার মায়ের করোনা হয়েছে। সন্দেহের কারণে মাকে চিকিৎসা না দিয়ে আইসিইউ থেকে জোর করে নামিয়ে দেন হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. আবু নাসের।
এদিকে এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক ডা, আবু নাসেরের নম্বরে অনেক বার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, সেদিন ওই বৃদ্ধার ছেলেরা রিপোর্টটি দ্রুত দেওয়ার জন্য আমার কাছে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু একটি পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে তো ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। তাই দ্রুত দেওয়া যায়নি। তবে রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত করোনা সন্দেহ করে চিকিৎসা না করাটা উচিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ ধরণের কিছু কিছু অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা বারবার বলছি, যেন এমনটা না করা হয়, বিএমএও বলছে কাউকে যেন চিকিৎসা বঞ্চিত করা না হয়। তবুও কিছু ঘটনা ঘটেছে। এজন্য মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।