বৃহস্পতিবার , এপ্রিল ১৮ ২০২৪
Home / মতামত / রাজারহাট ইউএনও’র ফেসবুক স্টাটাস জনগণের কাছে নিয়েছি অনেক,এখন সময় দেওয়ার

রাজারহাট ইউএনও’র ফেসবুক স্টাটাস জনগণের কাছে নিয়েছি অনেক,এখন সময় দেওয়ার

জনগণের কাছে নিয়েছি অনেক,এখন সময় দেওয়ার রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাঃ যোবায়ের হোসেন এর ফেসবুক স্টাটাস ভাইরাল।
নিচে হুবহু তার ফেসবুক স্টাটাসটা তুলে ধরা হলোঃ
আমি রাষ্ট্রের একজন নগণ্য কর্মচারী। রাষ্ট্র আমাকে বেতন দেয়, খাবার দেয়, আশ্রয় দেয়, আলো দেয়, বাতাস দেয়। রাষ্ট্রই আমার অস্তিত্ব, রাষ্ট্রই আমার ঠিকানা। আর এই রাষ্ট্রের একচ্ছত্র মালিক জনগণ। জনগণই আমাকে লালন পালন করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে, বড় করে তুলেছে। যে স্বাচ্ছন্দ আর সম্মানটা আমি এখন পাই, সেটাও এই জনগণেরই দান, জনগণেরই উপহার। আমার সেই আশ্রয়দাতা রাষ্ট্র আর অন্নদাতা জনগণ যখন চরম সংকটাপন্ন, যখন মারাত্মক এক ক্রান্তিকাল অতিবাহিত করছে, তখন তো আমি হাত বুকে করে বসে থাকতে পারি না অকৃতজ্ঞ আর স্বার্থপরের মত। এখন আমার মানুষের দুঃসময়, এখন আমার রিকশাচালক, ভ্যানচালক, মুচি, ঝাড়ুদার, দিনমজুর, নাপিত, গৃহকর্মী, চায়ের দোকানদার, হোটেল শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ঘরে টাকা নাই, বেঁচে থাকার মত প্রয়োজনীয় খাবার নাই। এখনও কি আমি বসে থাকব? আমি কি পারব তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে? আপনি কি পারবেন যন্ত্রণাক্লিষ্ট করুণ মুখগুলো দেখেও চুপ করে বসে থাকতে? পারবেন না, আপনার বিবেক আপনাকে এতবড় অন্যায় করতে দিবে না।
এই মানুষগুলো কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না, নিশ্চিত থাকুন এরাই আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে। আজীবনই এরা আপনাকে দেখে এসেছে, আপনাকে আদর যত্ন করে পরম মমতায় বড় করে তুলেছে, আপনার সুখের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে। আপনার পরম বন্ধু সেই মানুষগুলো আজ বিপদে পড়েছে, সীমাহীন কষ্টে আছে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আপনি তাদের বিপদে একটু এগিয়ে আসুন, অর্থ-খাবার দিয়ে একটু সহযোগিতা করুন, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে একটু পাশে এসে দাঁড়ান। আপনার ভাল থাকার জন্যই আপনাকে এটুকু করতে হবে। তারা স্বাভাবিক অবস্থায় আসলে আপনাকে একশ গুণ ফিরিয়ে দিবে, আপনি নিশ্চিত থাকুন, গুণে গুণে একশ গুনই ফিরিয়ে দিবে। এরা কখনও নেয় না, এরা নিতে জানে না, এরা ঋণী থাকতে জানে না। এরা শুধু দিতে জানে, অকাতরে দিয়েই যায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এই সাধারণ মানুষগুলোকে বড় ভালবাসেন, খুব আদর করেন। তিনি এই বিপদাপন্ন মানুষগুলোর জন্য খাবার পাঠিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, এই খাবার এতটুকু নয় ছয় হলে কাউকে ছাড়বেন না। আমরা ভাল করেই জানি, এই মানুষগুলোর উপর কোন ধরনের অন্যায় তিনি বরদাস্ত করবেন না। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং আপনাদের সেবক হিসেবে কথা দিচ্ছি, জেনেশুনে এবং আমার জীবন থাকা পর্যন্ত এই খাবারের একটি কণাও নয় ছয় করতে দিব না। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে পাওয়ার যোগ্য সবাই হয়ত পায়নি/পাচ্ছেন না, কিন্তু যারা পাচ্ছেন তারা অবশ্যই এই ত্রাণের হকদার। আমার বিশ্বাসমতে, ত্রাণ পাওয়ার অযোগ্য কাউকেই আমি ত্রাণ দেইনি। ত্রাণ আরও আসছে, আশা করি সততা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রকৃত হকদারদের মধ্যে বিতরণ করতে পারব। তারপরও প্রকৃত কেউ বাদ পড়লে দয়া করে আমাকে জানাবেন।
আর একটি কথা বলেই শেষ করব। এই সংকটময় সময়কে জনগণের ঋণ শোধের একটা সুযোগ মনে হয়েছে আমার কাছে। সে চিন্তা থেকেই আমি গত মার্চ মাসের বেতনের টাকাটা তাদের সেবায় সমর্পণ করেছি। আমি জানি, এটা সাগরে এক ফোটা জল ফেলার মতই নগণ্য। কিন্তু নিজের বিবেককে অন্তত এটুকু বুঝাতে পারব যে, আমার সদিচ্ছা আছে এবং আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমি চেষ্টা করেছি। (‘নিজে চলব কীভাবে’ সম্ভাব্য প্রশ্নটার উত্তরটা দিয়েই রাখছিঃ সদাশয় সরকার যে বেতন দেন, তার পুরোটা আমার খরচ হয় না, প্রায় অর্ধেকই জমা থাকে। সেটা দিয়েই আমার চলে যাবে।)
সকলেই ভাল থাকুন। আমার দেশ ভাল থাকুক। আমার মানুষ ভাল থাকুক।

About admin

Check Also

গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সময়ের ব্যাপার

বর্তমানে গণমাধ্যম পূর্বের তুলনায় বেশ আলোচিত। আগে গণমাধ্যম নিয়ে এতো আগ্রহ, কৌতুহল ছিল না। প্রযুক্তির …

একনজরে এন্ড্রু কিশোর

‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইব না আর বেশি দিন তোদের মাজারে’কিংবা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস …

‘বাবার জন্যে গর্বে বুক ভরে যায়’

বাবাকে নিয়ে অনেক গান কবিতা লেখা হলেও বাবার অপূর্ণতা কি কখনো পূরণ করা যায়? কে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *