সোমবার , ডিসেম্বর ৯ ২০২৪
Home / জাতীয় / সকল সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম: তথ্যমন্ত্রী

সকল সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম: তথ্যমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, “লাল সূর্য খচিত সবুজ পতাকা নিয়ে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ। আজকে আমরা মুসলমান, হিন্দু. বৌদ্ধ, খ্রীস্টান যেভাবে সুন্দর করে বসেছি, আমাদের বাংলাদেশও ঠিক এরকম সুন্দর। আমাদের রাঙ্গুনিয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আরো সুন্দর।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পকে চিরতরে বিদায় করার লক্ষ্যেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। তাই এই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নাই। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যারা ছড়ায় তারা প্রকৃতপক্ষে মানবতা ও বাংলাদেশের শত্রু।’

শনিবার (১৮ জুলাই) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে সকল ধর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাধারন সম্পাদক হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন আল কাদেরী, রাঙ্গুনিয়া সংঘরাজ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মসেন মহাস্থবির, সাধারণ সম্পাদক সুমঙ্গল মহাথের, রাঙ্গুনিয়া বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি জ্ঞানবংশ মহাথের, সৈয়দবাড়ি ধর্মপ্রবর্তন বিহারের অধ্যক্ষ পরমানন্দ থের। হিন্দু ধর্মীয় পুরোহিত সুজন চক্রবর্তী, অসীম চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য আঞ্চলিক চার্চ সংঘের প্রধান পালক রেভারেন্ড সহখরীয় বৈরাগী, রাঙ্গুনিয়ার বেতাগী আস্তানা শরীফের পীরজাদা মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, সরফভাটা মোয়াবিনুল উলুম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আবুল বয়ান, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাওলানা আইয়ুব নুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার প্রমূখ।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে আমরা কিভাবে অসাম্প্রদায়িকতাকে লালন করতে হয়, কিভাবে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ভাই ভাইয়ের মতো মিলিত হয়ে চলতে হয় সেই শিক্ষা আমরা পেয়েছি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি গ্রামের চিত্র হচ্ছে, এখানে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলমান একযোগে সুন্দরভাবে বসবাস করছে। আমার গ্রাম সুখবিলাসে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টানের পাশাপাশি চাকমা মারমারাও আছে। আমরা যেভাবে শতশত বছর ধরে একসাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বসবাস করছি সেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উদাহরণ। তাই কোন ব্যক্তি বিশেষ বা কোন গোষ্ঠির কারণে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারেনা।’

ড. হাছান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হয় দেশ এবং বিদেশ থেকে। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা ফেসবুক এবং ইউটিউবের আশ্রয় নেন। সেটির মাধ্যমে গন্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করে। তাই এগুলোতে বেশি কান দেয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ যদি সেরকম করে সেটি নিয়ে মাতামাতি করার কোন প্রয়োজন নেই।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমাদের প্রথম পরিচয় হচ্ছে বাঙালি, আমাদের দ্বিতীয় পরিচয় কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীস্টান। এটিই হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের সাথে যারা বিএনপি জামাত করেন তাদের পার্থক্য।

তিনি বলেন, “আমি ২০০৮ সালে যখন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি তখন আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন স্বজন কুমার তালুকদার বড়ুয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রধান এজেন্ট ছিলেন। উনি হিন্দু নাকি বৌদ্ধ নাকি মুসলিম এটি আমার বিবেচনায় নাই। এটি বিবেচ্য বিষয়ও নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে উনি আমার দল ও আমাদের নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল ও অনুগত কিনা।”

সকল ধর্মীয় নেতাদের প্রতি শান্তির জনপদ রাঙ্গুনিয়াকে আরো শান্তিময় ও প্রীতিময় করার অনুরোধ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ফেসবুকে কে একটা লিখলো সেটা নিয়ে অন্যরা লেগে থাকবো এটাও হতে পারেনা। আমাদের কাছে কে কোন ধর্মাবলম্বি সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, কে মানুষ কে বাঙালি সেটা বিবেচ্য বিষয়। তাই সকলের কাছে অনুরোধ, কোন ব্যক্তির কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে পারেনা। এবং সেই লক্ষ্যে যেকোন অশুভ শক্তির ব্যাপারে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে।’

তিনি বলেন, রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নের জন্য সরকার থেকে এক কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তখন ভাগ করে সেখান থেকে চল্লিশ লাখ টাকা মন্দির, বিহারসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। রাঙ্গুনিয়ায় ইসলাম ধর্মোর জন্যও অনেক কাজ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে নতুন মসজিদ করা হয়েছে। শতাধিক মসজিদ ভিত্তিক মক্তব করা হয়েছে। প্রতিটি মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিশেষভাবে বরাদ্দ এনে হিন্দু ধর্মীয় মন্দির ও বৌদ্ধ বিহারগুলোর উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী নিজের জীবনের সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমি যখন ছাত্রজীবনে ঢাকায় যেতাম, তখন আমি কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারে থাকতাম। সেখানকার গুরুভান্তে সদ্য প্রয়াত শুদ্ধানন্দ মহাথেরো’র বাড়ি আমাদের এলাকায়। আমার বাবার সমসাময়িক। আমি তাকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতাম, উনিও আমাকে সন্তানের মতো আদর করতেন। এটার মধ্যে কোনো খাদ ছিলনা’।

তিনি বলেন, “দিনের বেলা না খেলেও রাতের বেলা সেখানে খেতাম। একথা আমি ঢাকায় বৌদ্ধ মন্দিরসহ সবখানে বলেছি। মানুষ বড় হলে অতীতের কথা বলেনা, ভুলে যায়। আপনাদের দোয়া ও আশির্বাদে আল্লাহর রহমতে প্রধানমন্ত্রী আমাকে একবার প্রতিমন্ত্রী, দুবার কেবিনেট মন্ত্রী করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। যারা আমাকে নানাভাবে স্নেহ দিয়েছেন বড় করেছেন, তাদের কথা আমি ভুলতে পারিনা। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন শুদ্ধানন্দ মহাথের।”

হাছান মাহমুদ বলেন, আমার ছোটকালে একজন শিক্ষক ছিলেন মৌলভি আবদুর রহমান, তিনি আমাকে দশ বছর পড়িয়েছেন। আমার জীবনের সমস্ত নীতি নৈতিকতার অনেক কিছু আমি তাঁর কাছে শিখেছি।

মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ বলেন, যুগ যুগ ধরেই রাঙ্গুনিয়ায় সকল ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে একসাথে বসবাস করে আসছে। ভবিষ্যতেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে।

About admin

Check Also

সাবেক আইজিপি মামুন ও শহীদুলকে রিমান্ডে পাঠাল আদালত

সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাবেক আইজিপি শহীদুল হককে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আদালত …

২৯৭ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামের এক তরুণকে হত্যার মামলায় ১২ সাংবাদিকসহ ২৯৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা …

দ্য গার্ডিয়ানের নিবন্ধ শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে দোটানায় পড়েছে ভারত

অগাস্ট মাসের শুরুতে, যখন বাংলাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারি দমনপীড়নের জেরে বাড়তে থাকে লাশের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *