কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ সীমাহীন দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম সহ নানান অপকর্ম সংঘটিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় একটি তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মেলেন্দু রায় গত ১৫ই জুলাই এই তদন্ত সম্পন্ন করেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে স্পষ্ঠ প্রতিয়মান হয়েছে যে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আশরাফুল মজিদের দুর্নীতি তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্জ পনির উদ্দিন আহমেদ কর্তৃক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর ডিওটি সঠিক। এই ডিও মোতাবেক প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আশরাফুল মজিদকে রাজশাহীর পুঠিয়ায় বদলীর আদেশটিরও সত্যতা প্রমানীতহয়েছে।
চাকুরীবিধি লংঘন করে মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক বদলীর আদেশ ( স্মারকঃ স্বা:অধি:/প্রশা -৩/বদলী কমিটি-৫৫৫/২০২০/১০৯০/১(১২) তাং ০১.০৩.২০২০ ইং) অমান্য করে অদ্যবধি কুড়িগ্রাম হাসপাতালে কর্মরত থাকার কারণে প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আশরাফুল মজিদ এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি হতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ আবু মোঃ জাকিরুল ইসলাম হিসাব রক্ষক আশরাফুল মজিদকে রিলিজ না দেয়ায় তার বিরুদ্ধেও চাকুরীবিধি লংঘনের অভিযোগ উত্থাপিত হতে যাচ্ছে।
এছাড়াও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সকল দুর্নীতি বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে শীঘ্রই উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হতে যাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। সম্প্রতি তথ্য প্রমান সহ কয়েকটি অভিযোগ ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর উপস্থাপিত হয়েছে।
গত ১৫ই জুলাই এ লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন কর্তৃক তদন্ত অনুষ্ঠানে আল আরাফাত সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের স্থানীয় প্রতিনিধি মোঃ নুরুজ্জামান (জামান) সম্প্রতি আউটসোর্সিং এর টেন্ডারে ব্যাপক দুর্নীতি ও জালিয়াতির তথ্য প্রমান উপস্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে নুরুজ্জামান বলেন, টেন্ডারটির চুক্তিনামা মূল ঠিকাদার করেননি। এ বিষয়ে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার স্বরলিপি সিকিউরিটি প্রা:লিঃ এর স্বত্বাধিকারী রেজাউল করিম স্বয়ং লিখিত অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চুক্তিনামাপত্র গত ৩রা জুন ২০২০ইং তারখে স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এর মেইল এ প্রেরণ করা হয়। যার সূত্রঃ জেনা: হাস:/কুড়ি:কমিটি /২০১৯-২০২০/৮৬৬/১(৪) তারিখঃ ২০.০৫.২০২০ ইং। এই পত্র প্রাপ্তির ৪ মিনিট পরে তিনি একই মেইলে কার্য্যাদেশের পত্রটিও পান যার সূত্রঃ জেনা:হাস:/ কুড়ি: কমিটি /২০১৯-২০২০/৮৭২ তাং ২২.০৫. ২০২০ ইং।
কিন্তু চুক্তিনামা সম্পাদন ব্যতিরেকে এবং ১৪ দিন পরে ইস্যুকৃত পত্র প্রাপ্তিতে ঠিকাদার বিস্ময় প্রকাশ করে চুক্তিপত্রের অসঙ্গতিসমূহ দূর করে নতুন করে চুক্তিনামা সম্পাদন ও কার্য্যাদেশ প্রাপ্তির লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এর তত্বাবধায়ক বরাবর ওই একই তারিখে স্বাক্ষরকৃত পত্র গত ৪ জুন ২০২০ ইং এ হাসপাতালে জমাদান ও মেইলে প্রেরণ করেন।
ওইসময় স্বরলিপি সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী লিখিত অভিযোগে জানান যে, তার স্বাক্ষর, সিলমোহর ও প্যাড জাল করা হয়েছে। তিনশত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে হাসপাতাল কতৃপক্ষের সঙ্গে তিনি কোন চুক্তি সম্পাদন করেননি এবং জামানতের ৪৭ হাজার টাকার পে-অর্ডারও প্রদান করেননি।তাছাড়া এই ঠিকাদার ব্যাংকের কাগজপত্র সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জাল করে টেন্ডার সাবমিট করেন। এরপরেও ১ মাসের চুক্তিতে ২০ জন ক্লিনার ও ৯ জন সিকিউরিটি গার্ড সহ মোট ২৯ জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া দেরিতে হলেও সম্পন্ন করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
জানা গেছে বিগত অর্থ বছরের এক মাসের নিয়োগ হিসাবে জুন মাসের একটি নিয়োগ প্রস্তাবনা এবং চলতি অর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে আরেকটি নিয়োগ প্রস্তাবনা নিয়ে তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলাম এখন ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তদন্ত রিপোর্ট জমাদানের পূর্বে অনুমোদনের জন্যে তদবিরের চেষ্টা করছেন। কিন্তু মহাপরিচালক সহ সংশ্লিষ্ঠ পরিচালক হাসপাতাল এর বদলীর কারণে তত্বাবধায়ক এ মুহূর্তে অনুমোদন নিতে পারবেন না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অভিযোগকারীদের অন্যতম বিপুল জানান, এমুহুর্তে সরকার ও প্রশাসন স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ জাকিরুল ইসলাম ও প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক আশরাফুল মজিদ এর দুর্নীতি সমূহ দিবালোকের মত পরিষ্কার। আশাকরি খুব শীঘ্রই তারা আইনের আওতায় আসবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিযোগকারী বলেন, কুড়িগ্রামের অসহায়, দুস্থ রোগীদের চিকিৎসার নামে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে যারা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে, সহসাই তারা ফেঁসে যাচ্ছেন।