
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
মোর রিক্সাত এলা কাইয়ো চড়বের চায় না বাহে। মুই বুইড়া মানুষ, শরীরে শক্তি কমি গেইছে, জোড়ে রিক্সা চালাইতে পারি না। তাই আমার রিক্সায় কেউ চড়বের চায় না। সগাই সবল রিক্সাওয়ালা খোঁজে বাহে ! কথা গুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দেওয়ানের খামার গ্রামের বাসিন্দা বয়সের ভাড়ে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ রিক্সাচালক আনিছুর রহমান।
বৈদ্যুতিক বেটারি চালিত বাহারি রঙ্গের অটো রিক্সার ভীরে সেকেলে হয়ে গেছে তার পা প্যাডেলে চালিত রিক্সাটি। প্রযুক্তির কাছে যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন বৃদ্ধ রিক্সা চালক।
জাতীয় পরিচয় পত্রে জন্ম সাল ১০ ডিসেম্বর ১৯৩৭। বর্তমানে তার বয়স ৮৫ বছর। মাথার চুল ও দাড়ি পেকে ধবধবে সাদা হয়ে গেছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ, শক্তি অনেকটা কমে গেছে । হাতের রগগুলোও ফুলে উঠেছে। বয়সের ভারে চামড়াও কুচকে গেছে। তবুও এ বৃদ্ধ বয়সেও রিক্সা চালিয়ে জীবন সংগ্রাম অতিবায়িত করছেন তিনি। পঁচাশি বছর বয়স্ক বৃদ্ধ জীবন সংগ্রামে পরাজয় মেনে নিতে নারাজ।
গত সোমবার কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। আজ কত টাকা রোজগার হয়েছে এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি জানান সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়েছে মাত্র ২৫/-(পঁচিশ) টাকা। এ দিয়ে কি হবে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেন রিজিকের মালিক আল্লাহ্। আজ আল্লাহ্ আমার রিজিকে যা রেখেছেন তাই পেয়েছি।
এলাকাবাসী জানান, তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ মোট চারসন্তানের জনক আনিছুর রহমান জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এখনো রিক্সার প্যাডেল চেপে চলেছেন নিরন্তর। সন্তানেরা কেউ খোঁজ রাখেনা। একদিন রিক্সা না চালালে সেদি’ন চুলো জ্বলে না এই হতভাগা বৃদ্ধের। বিভিন্ন রোগ ধরে ফেলেছে এই বৃদ্ধ মানুষটিকে। স্ত্রীও অসুস্থ তার চোখের অপারেশন করা হয়েছে। অনেকেই তার রিক্সায় উঠতে চান না। কারণ বয়সের ভাড়ে নূয়ে পড়া বৃদ্ধ পাপ্যাডেল দিয়ে রিক্সা চালায় যা দ্রুত চলে না। তাই সকলেই এখন বেটারী চালিত অটো রিক্সায় চড়েন।
আনিছুর রহমান জানান, তার একটা বটোরি চালিত অটো রিক্সার খুব প্রয়োজন। কিন্তু কেনার সামর্থ্য নাই। সরকারি সুবিধা হিসেবে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড রয়েছে। সে ভাতার টাকা দিয়ে ঔষধ কেনার টাকাও হয় না।
প্রতিবেশি স্কুল শিক্ষক আরিফুর রহমান শাহিন জানান, বৃদ্ধ আনিছুর রহমান অত্যন্ত সৎ ও ভালো মানুষ। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তার এ অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। সমাজের বিত্তবানদের এ সমস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা খাতুন বলেন, যতটুকু পারি বিভিন্ন সময় সরকারি সাহায্য প্রদান করি। কিন্তু তা দিয়ে একটি অটো রিক্সা কেনা সম্ভব না। তাই সকলের সম্মেলিত চেষ্টায় একটি অটো রিক্সা যদি কিনে দেওয়া যেত তাহলে ভালো হতো।