
রংপুর থেকে, নাসরিন নাজঃ
রংপুর মহানগরের রাস্তা ফাঁকা, কাঁচাবাজার ও মাছ বাজারে ভিড়।
রংপুরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে রংপুর নগরে শুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ফাঁকা রয়েছে নগরের বেশির ভাগ পথ রাস্তা-ঘাট সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মহাসড়ক ।
বন্ধ রয়েছে বিপণী বিতান, শপিং মল সহ ছোট বড় সকল ধরনের মার্কেট।
গণ পরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়কে থ্রি-হুইলার, সিএনজি, অটোবাইক, রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং জরুরি সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি সেবার আওতায় ঔষুধের দোকান, ফার্মেসি, কাঁচা বাজার সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর দোকানপাট খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজার ও মাছ বাজারে সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করেছে অধিকাংশ জনগণ ।
বুধবার ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর নগরীর সড়ক গুলো ঘুরে দেখা যায়, লক ডাউনের প্রথম দিনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া বন্ধে টহল অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে নগরের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোর অবস্থানে আছে পুলিশ সদস্যরা ।
টহল অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
সকালে নগরীর রেল স্টেশন, আলম নগর, কেডিসি রোড, পার্কের মোড়,মর্ডাণ মোড়, শাপলা চত্বর, গ্রান্ড হোটেল মোড়, জীবনবীমা মোড়, প্রেস ক্লাব, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর ও সেন্ট্রাল রোড ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা।
খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। ঔষুধ এবং মুদি দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকানপাট তালাবদ্ধ ।
তবে নগরীর বৃহৎ পাইকারি বাজার রংপুর সিটি বাজারে ব্যাপক লোক সমাগম দেখা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদাসীনতা কাজ করছে। বাজারে মানুষের ভিড়ে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই বললেই চলে ।
সকাল থেকে নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। কেউ রাস্তায় বের হলে পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। জরুরি কাজ থাকলে পুলিশ সদস্যরা তাকে দ্রুত কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার নির্দেশ দিচ্ছেন ।
এদিকে অহেতুক বাইরে বের হতে নিষেধ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।এছাড়াও স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলোর মধ্য মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশন, ডাঃ হারুন স্মৃতি পাঠাগার, সাফল্য সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার বাংলাদেশ, প্রচারে অংশ নিয়ে প্রচারে কাজ করছেন।
করোনার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বুধবার থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনে অলিগলিতে পুলিশের টহল না থাকায় কোথাও কোথাও উৎসুক মানুষের জমায়েত দেখা গেছে। তবে নগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্টে জিজ্ঞাসা করে যেতে দেওয়া হয়।
নগরীর স্টেশন রোড জীবনবীমা মোড়ে সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবকের সঙ্গে কথা হলে তিনি দৈনিক মাধুকর প্রতিনিধিকে বলেন, আমি একটা কোম্পানি কাজ করি। জরুরি প্রয়োজনে লালবাগ থেকে মেডিকেল মোড় এলাকার দিকে যাচ্ছিলাম। এটুকো পথ আসতেই শাপলা চত্বর সহ জীবন বীমা মোড়ে দুবার পুলিশের জিজ্ঞাসার মুখোমুখি পড়তে হয়েছে। তবে প্রশাসনের কড়াকড়ি অবস্থানে আজকে মনে হচ্ছে লকডাউন চলছে। রাস্তায় তেমনটি মানুষ নেই। রিকশা পেতেও সমস্যা হচ্ছে।
সিটি বাজারে ঘুরে বেশির ভাগ মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। তবে পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে অনেকেই পকেট থেকে মাস্ক দেখান এবং পড়েন ।
মূল সড়কে পুলিশের টহল
এ ব্যাপারে নাদিম হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, মাস্ক তো সঙ্গেই আছে, কিন্তু মুখে দিয়ে কথা বললে কাস্টমার ঠিকমতো শুনতে পান না। এ কারণে পকেটে রেখেছি মাস্ক। বেশির ভাগ দোকানির অবস্থা একই।
লকডাউন পরিস্থিতি তদারকি ও বাস্তবায়নে প্রশাসন মাঠে রয়েছে জানিয়ে রংপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রায়হানুল ইসলাম বলেন, সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ অহেতুক বাইরে ঘোরাঘুরি করলে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তির মুখে পড়তে হবে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানান।
করোনার সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দফায় মানুষের চলাচল ও কার্যক্রমে বিধি-নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বুধবার থেকে আটদিনের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন সরকার। এ লকডাউনে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকবে।