আবু নাসের সিদ্দিক তুহিন
উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক উত্তরার সম্পাদকের ইন্তেকালের মাধ্যমে একটি সংবাদপত্র জগতের প্রাণ পুরুষের অধ্যায়ের ইতি ঘটলো।
অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন আশির দশকের শুরুতেই এই তারুণ্য দীপ্ত মানুষের সাথে আমার পরিচয় সে ছিলেন মিষ্টভাষী, উজ্জীবিত, অনুপ্রাণীত,সংগঠিত করার মতো নিবেদিত এক অনন্য মানুষ। তাকে ঘিরে রয়েছে আমাদের অনেকেরই অনেক স্মৃতি অনেক ইতিকথা।
গত ০৯ এপ্রিল ২০২১শুক্রবার দিনাজপুর তথা
উত্তরবঙ্গের প্রাচীন সংবাদপত্র দৈনিক উত্তরার সম্পাদকের ইন্তেকাল করেন।জানতাম না দিনাজপুর জেলার ঘোড়া ঘাট উপজেলায় সাফল্য সাহিত্য আড্ডায় প্রধান অতিথি হওয়ার সুবাধে ঘোড়াঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতির সাথে আলাপচারিতার একটি পর্যায়ে সে জানান দেয় মহসীন স্যার আর নেই,গত ২/৩ দিন আগে সে ইন্তেকাল করেন।শুনে বিশ্বাস হলো না, তারপরও গাইবান্ধা ফিরে সাংবাদিক উজ্জ্বল চক্রবর্ত্তীকে জিঙ্গাসা করে জানতে চাইলাম এই বিষয় সম্পর্কে সেও বলতে পারলেন না, তারপর দিনাজপুরের কয়েকজন সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের প্রকাশীত সংবাদের মাধ্যমে নিশ্চিত হলাম আমাদের অনেকের খুবই প্রিয় মানুষ আর বেঁচে নেই।কষ্ট পেলাম আর ভাবতে লাগলাম এভাবেই প্রতিটি মানুষকে নিশ্চিত বিদায় নিতেই হবে। স্যার অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন আপনি যেখানেই থাকবেন নিশ্চয়ই ভালো থাকবেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। গত ৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় দিনাজপুর জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তিনি দিনাজপুর কেবিএম কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে এবং নাতি-নাতনি সহ অসংখ্য গুণোগ্রাহী রেখে গেছেন।
মরহুমের ভাই সাংবাদিক আসাদুল্লাহ সরকার জানান, গত ৩ এপ্রিল সকালে দিনাজপুর শহরের রাম নগরের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুহম্মদ মুহসীন। দ্রুত তাকে দিনাজপুর জিয়াহার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল ১০টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শুক্রবার বাদ জুম্মা দুপুর ২টায় রামনগর ঈদগাহ মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর দুপুর আড়াইটায় দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে এবং বাদ আছর তার নিজ গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার সিকদারগঞ্জ হাটে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয় ।
তার বাবার জানাজা ও দাফনকার্যে সকলকে শরিক হওয়ার জন্য ছেলে আহম্মেদ জাকি সুমন সকল স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং বহু মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা গুলো ও দাফন সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, দৈনিক উত্তরা উত্তরবঙ্গের প্রথম দৈনিক পত্রিকা। যার রেজিস্ট্রেশন নং : রাজ-০১।
আশির দশকের শুরুতেই আমার যাওয়ার সুযোগ হয় দিনাজপুর মামার বাড়িতে যাওয়ার দিনাজপুরে নিউ টাউনে তাদের সে সময় ছিলো শিল্পী বেকারি, বাহাদুর বাজারে ছিলো ডিমের আড়ত,আমি সেসময়ই বাহাদুর বাজার গিয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসিন স্যারের সাথে পরিচয় ঘটে আমি হই দৈনিক উত্তরার গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি পেপারটি গাইবান্ধায় বেশ বিক্রি হতো এক সময় ৫ শ কপি পর্যন্ত বিক্রি উঠেছিলো নিউজ পাঠাতাম কত কষ্ট করে ট্রেনে। একটি সময় আমি রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি হই নিয়মিত রিপোর্ট করা হতো আমার বেশ আনন্দ পেতাম সে সময়, নিজের ক্যামেয়ায় তোলা ছবি প্রকাশ কার না ভালো লাগে, সেসময় গাইবান্ধায় দৈনিক উত্তরা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। আমি হয়ে উঠলাম জেলার প্রথম ফটো সাংবাদিক। ধারাবাহিকতায় গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী, শামসুজ্জোহা বাবলু, এম আব্দুল্লাহ এম, মফিজুর রহমান খোকা প্রমুখ ।
তার প্রকাশীত যে কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে তার সবগুলো কপিই আমাকে সে দিয়েছে আমি পেয়ে তারপর নেই ধন্য।একটা সময় আমেরিকা থেকে রোল্যান্ড প্রাভো ছাপামেশিন,, কোটি টাকা দিয়ে আধুনিক মেশিন দিনাজপুর আনেন,যা এখনো মনে পড়ে।কিন্তু কালেভদ্রে তা চালানো হয়নি বেশিদিন তারপর ঢাকায় সেই মেশিনের বানিজ্যিক অবস্থান ঘটে। সেখানেও সবসময়ই আমি যাতায়াত ছিলো, ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়েছে কয়েক মাস।নব্বইয়ের দশকে দৈনিক উত্তরা বেশ জনপ্রিয় একটি প্রকাশনা যা এখনো গর্ব করে বলতে পারি।কোন একদিন আমাকে স্যার ডেকে একটি চিঠি দিলেন আমাকে জানালেন বেশ বড় একটি আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান অবশ্যই যাবে, যথারিতী গেলাম আয়োজনে সব ভিআইপি মানুষদের আয়োজন এবং তাদেরই আনাগোনা আমি এই অনুষ্ঠানে সবচেয়ে ক্ষুদ্র মানুষ মাত্র, বাংলাদেশে ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারকে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতায় পুরস্কার বিতরণের আয়ো ততকালীন সরকার প্রধান আয়োজনের প্রধান অতিথি। বেশ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছিলাম সেদিন যা এখনো অনেককে গল্পের ছলে বলি।আমি ঢাকায় থাকাতে স্যার সবসময়ই আমার খোঁজখবর নিতেন সহযোগিতা করতেন সবসময়ই বিনিময়ে কিছুই চাইতো না, অন্যরকম একজন মানুষ আমার কাছে।
মাঝে অনেকদিন দেখা নেই সাক্ষাৎ নেই স্যারের সাথে দিনাজপুর গেলাম কয়েকটি মিশন নিয়ে ভাবলাম স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে যেমন চিন্তা তেমনি কাজ। বাহাদুর বাজার দৈনিক উত্তরা অফিস গিয়ে দেখি স্যার একা একটি রুমে টাইপিং করে পেপার রেডি করছেন বয়স প্রায় ৮০ কি প্রানবন্ততা কি উচ্ছাস কি দায়িত্বশীলতা কি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা পেপারকে ঘিরে। আমার সাথে ছিলেন সাফল্য সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়িতা নাসরিন নাজ। তার সাথে আলোচনা হলো সে কুশলাদি করে নিয়ম অনুযায়ী আতিথেয়তা করবেনই মিষ্টি, সিঙ্গাড়া, সামুচা,পুড়ি, গরম চা ইত্যাদি খুব খেয়েছি গেলেই খাওয়ার আয়োজন করতেন। তার মাধ্যমেই খোঁজ পেলাম দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম,জাকিয়া তাবাসসুম জুঁই সহ অনেকের সাথে।
দৈনিক উত্তরার একসময়ের বার্তা সম্পাদক ইদ্রিস আলী খুবই ভালো মানুষ তার কাছ থেকে প্রিয় মানুষ অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন স্যারের খোঁজখবর নেয়া হতো। অনেকটা সময় সাপ্তাহিক জনমত যা এখন দৈনিক জনমত এ্যাড বিধান দাদার সম্পাদনায় নিয়মিত বের হতেন তার কাছেও খোঁজ নেয়া হতো।
আমরা প্রতিটি মানুষ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবো কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু মানতে কেন জানি কষ্ট হয়, তেমনি একজন বরেন্য মানুষ অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসিন চিরদিন আমাদের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকবেন, আমরা আপনার প্রথিকৃত, ভালো কাজের কলম সৈনিক।
লেখকঃ আবু নাসের সিদ্দিক তুহিন, বিভাগীয় প্রতিনিধি দৈনিক উত্তরা, সাধারণ সম্পাদক সাফল্য সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক দক্ষিণ পাড়া, পুলিশ লাইন রোড, গাইবান্ধা।