
গোলাম মাহবুবঃ
শেখ হাসিনা হামাক ঘর দিচে,ঘর পায়া মুই অনেক সুখে আছোং বাহে। মোর জীবনে এইদেন ঘর কইরবের পানু না হয়,সেই দালানোত এহন ঘুম আইসোং বা। সোনার চাদ ব্যাটাটাক হারাইছোং ৫বছর হইল, এ্যালাও দিন আইত ব্যাটাক খুজবের নাকছোং,তাতে ফির বাড়ী-ঘর ভাঙ্গি দিছে ওয়াপদার লোকেরা। থাকিবের যাগা আছিলো না এই সমায় প্রধানমন্ত্রীর ঘর পায়া বুড়ে-বুড়ি খুব সুখে আছি বাহে। প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ ঘরের সামনে যেতেই হর হর করে কথা কটা বললেন সত্তরউর্ধ্ব আব্দুল মালেক। অবস্থাদৃষ্টে যেন অনেকদিন ধরে এ প্রতিবেদকের কাছে কথা কটা বলার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলাধীন থানাহাট ইউনিয়নের ঠকেরহাট উচাভিটা এলাকায় নবনির্মিত আশ্রয়ণের ঘরে আশ্রয় নেওয়া মৃত যুমল শেখের ছেলে আব্দুল মালেক(৭৭)।
উপজেলার ঠকেরহাট উচাভিটা এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দেখতে গেলে দ্বিতীয় সারির ১ম ঘরের বারান্দা দেখা মেলে সত্তরউর্ধ্ব আব্দুল মালেকের। ঘরের সামনে যেতেই আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে প্রতিবেদকের সাথে কিছু বলতে চাইলেন। বৃদ্ধের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখে কিছু জানতে চাইলে আনন্দাশ্রæসিক্ত চোখে তিনি বলেন,আইজ খুব খুশি নাইগছে বাহে।শেখ হাসিনা হামাক ঘর দিছে,সেই ঘরোত আরামে আছি বাহে। সারা জেবনে এমন ঘর কইরবের পানু না হয় বা,সেই দালানোত ঘুমাই। বাকি দিন দুইটে এটে থাকি মইরবের পাইলে হয় বাবা। এরপর অশ্রæসিক্ত চোখে বলতে থাকে ৫বছর আগে মোর সোনার ব্যাটাটা হারে গেইছে,দুইবার নদী ভাঙ্গি বান্দের রাস্তাত ঘর করি আছিনু সে ঘরও গতবার ওয়াপদায় ভাঙ্গি দিছে বাবা।বাড়ী-ভিটে নাই দেখি রায়হান টিএনও স্যার মোক একটা ঘর দিছে সেই ঘরোত বুড়িসহ থাকং বাবা। জানলা খুলি দিলে হর হর করি বাতাস নাগে।খুব শান্তিতে আছি।
রাস্তায় দাড়িয়ে কথা হলে তিনি শুনালেন, কড়ালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদ কয়েক দফায় তার বাড়ী ভেঙ্গে নেয়। সর্বশেষ ভিটে-মাটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর পাউবো বাঁধ রাস্তার ধারে বাড়ী করেন তিনি। নদী ভাঙ্গনের পর সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ায় তার ছোট ছেলে হাবিবুর রহমান মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজ করে সংসারের খরচ চালাতেন। ৫বছর আগে ছেলেসহ তিনি নিজে রাজশাহীতে রাজ মিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন। একদিন দুপুরে হঠাৎ করে সেই ছেলে হাবিবুর রহমান নিখোঁজ হয়ে যায়। পায়ে হেটে গোটা রাজশাহী অঞ্চলে তিনি ছেলের সন্ধান করেছেন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সেখানকার সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি দিয়েও ছেলের সন্ধান পাননি তিনি। অসহায় হয়ে তিনি বাড়ীতে ফিরে আসেন। বাড়ীতে স্ত্রী ও বড় ছেলে এবং ছেলের স্ত্রীসহ তিনটি মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে হামিদুল ইসলাম শারীরিকভাবে অক্ষম। আঃ মালেকের স্ত্রী হাজেরা বেগম(৬৫)শুনালেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ রাস্তার স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে। বাড়ী-ঘর ভেঙ্গে দেয়ারপর অন্যের বাড়ীর উঠানে চালা পেতে আশ্রিত ছিলেন প্রায় দেড় বছর। বাড়ী করার মতো কোন জায়গা-জমি না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার একটি ঘর পান তারা।এসব কথা বলতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। যেন শত কষ্টের মাঝে এক চিলতে হাসি।
উপজেলার ঠকেরহাট উচা ভিটা এলাকায় নবনির্মিত ১৮টি ঘরে ১টি করে পরিবার উঠেছে। ইতোমধ্যে তারা নিজেদের মাঝে সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসময় ঘরের বারান্দায় বসে খোস গল্পেরত অবস্থায় দেখা মেলে আছিয়া বেওয়া,রেপুনা বেগম,গুন্দরি বেওয়া,রঞ্জিনা,নুর নাহার,বছিরন ও প্রতিবন্ধি হামিদুলের। তারা জানায়,তাদের নিজেদের কোন জায়গা-জমি না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে তারা জমিসহ ইটের পাকা ঘরের মালিক হয়েছেন। বাকি জীবন টুকু তারা সেখানেই কাটাতে চান। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতার কথাও জানান তারা।