
নাগেশ্বরী প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানায় ভাগিনাকে স্বামী দাবী করার এক চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া গেছে। তবে এ দাবী অস্বীকার করেছে ভাগিনা এরশাদ। তাকে ফাঁসাতেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলেও দাবী এরশাদের। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কেদার ইউনিয়নের টেপারকুটি শকুনটারী গ্রামে।
গত ১৫ জুলাই উপজেলার কচাকাটা থানায় এরশাদকে স্বামী দাবি করে এরশাদসহ তার পরিবারকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন ওই কথিত খালা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করছেন বলে জানিয়েছেন বাদী ও কচাকাটা থানা পুলিশ।
মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ভেল্লিকুড়ি চর ভূরুঙ্গামারীর মৃত নজরুল ইসলামের কন্যা নাজমা (ছদ্মনাম) (২৯) উপজেলার কেদার ইউনিয়নের টেপারকুটি শকুনটারী গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে এরশাদুল হক (২৭) এর সাথে চলতি বছরের ২৭ জুলাই ১০ লাখ টাকা কাবিনে ইসলামি শরীয়া মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা দুজনেই কুড়িগ্রামে একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। এক পর্যায়ে ১৮ জুন এরশাদুল হক তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে নিজ বাড়িতে চলে আসে। পরে ২০ জুন সাড়ে ১২ টার দিকে এরশাদুলের বাবা মজনু মিয়া নাজমার কাছে ৮ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। টাকা না দিলে ছেলেকে অন্যখানে বিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়া হয় তাকে।
মামলার এজহারে উল্লেখ রয়েছে, ২২ জুন স্বামীকে ফিরে পাওয়ার দাবীতে এরশাদুলের বাড়িতে এলে এরশাদুলের পরিবারের লোকজন তাকে শারীরিক নির্যাতন করে।
এ বিষয়ে এরশাদুল হক বলেন, ’আমাকে মিথ্যা দোষারোপ করা হচ্ছে। আমার বাবা ওই মহিলার কাছে যৌতুকের টাকা চাইবে কেন? তার সাথে আমার কোনো বিয়েই হয়নি। ওই মহিলার দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে, বড় ছেলে তো প্রায় আমার সমান। তাকে বিয়ে করার প্রশ্নেই আসে না। আসলে তাকে কেউ বিয়ে করা লাগে না। ও যাকে খুশি তাকে স্বামী দাবী করে বিয়ের ভূয়া কাবিনে মোটা অংকের টাকা তুলে শেষে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে তাকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করে। এটা তার ব্যবসা।’
এরশাদুল হক আরও জানান– ওই মহিলার প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব অল্প দিনের মধ্যে আরও দুটি বিয়ে হয়। তার একটি ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উলিপুর থানার পূর্ব নাওডাঙ্গা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সাইদুল ইসলামের সাথে। পরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর নাজমা নিজেই তালাক দেয়। পরবর্তীতে তালাকপ্রাপ্ত স্বামী সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভূরুঙ্গামারী থানায় পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং– ১৫। সে মামলায় ওই মহিলা আমাকে ভাগিনা উল্লেখ করে করে আমাকে স্বাক্ষী পর্যন্ত বানিয়েছে।
এরশাদুল বলেন, ’অপর বিয়েটি হলো চর ভূরুঙ্গামারীর মৃত শুকুর আলীর ছেলে জয়নাল আবেদীন এর সাথে। বিয়েটি ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এফিডেভিট এর মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর করে বিয়ে করেন।’
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এরশাদুলের সাথে বিয়ের কাবিন নামায় নিজেকে তালাকপ্রাপ্তা দাবী করলেও আসলে তিনি জয়নাল আবেদীন কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত নন। এছাড়া নাজমা কর্তৃক কোনো তালাকের কাগজ এখনো পাননি বলে জানিয়েছেন জয়নাল আবেদীন।
তালাকে বিষয়ে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘প্রায় দু‘বছর আগে নাজমার সাথে আমার বিয়ে হয়। ওর এবং আমার বিয়ের বিষয়ে এলাকার সবাই জানে। তার নামে জমিও লিখে দিছি। এই তো গত জুন মাসে আমার কাছে কাজের কথা বলে এক লক্ষ টাকা নিল। টাকা নেয়ার পর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আজও তালাকের কোনো কাগজপত্র পাইনি।
এরশাদুল হক সম্পর্কে নাজমা খাতুন বলেন, ’ধর্মীয়ভাবে এরশাদুল হকের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। এ বিষয়ে সকল কাগজপত্র আমার কাছে আছে।’
কচাকাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ’আমরা ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিক্যাল রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। মেডিকেল রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে মামলার পুলিশ প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।’