বুধবার , সেপ্টেম্বর ১৮ ২০২৪
Home / সারা দেশ / ৪ বছর ধরে দুর্ভোগে লাখো মানুষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ

৪ বছর ধরে দুর্ভোগে লাখো মানুষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিলের আদেশ স্থগিত এবং কাজ চলমান রাখা নিয়ে উচ্চ আদালতের রুল জারির পরও কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ধরলা সেতু এ্যপ্রোচ-যাত্রাপুর জিসি সড়কে সেতু নির্মাণ কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে খোদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ঠিকাদারের অভিযোগ, দুই দফায়
উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কপি এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার পরও নির্বাহী প্রকৌশলী চুক্তি বাতিলের ‘অজুহাত’ তুলে কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন যা আদালত অবমাননার শামিল। এতে কওে নির্মাণ কাজ স্থবির হয়ে জনগণের চলাচলে ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

গত ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টেও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ একটি রিট পিটিশনের (নং ৮৩২৬/২০২১) প্রেক্ষিতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে এক মাসের জন্য স্থগিত এবং ক্ষমতা প্রাপ্ত ঠিকাদারকে কেন কাজ চলমান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানাতে চার সপ্তাহের সময় দিয়ে রুল জারি করেন। রুলে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর এই আদেশের সময়সীমা আরও তিন মাসের জন্য বর্ধিত কওে আদেশ দেন আদালত। তবে এলজিইডি, কুড়িগ্রাম কর্তৃপক্ষ বলছে তারা আদালেতের নির্দেশনার এমন কোনও কপি পাননি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করা এবং বার
বার চিঠি দিয়ে কাজ শুরুর তাগদা দেওয়ার পরও নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদারের সাথে আইনগত প্রক্রিয়ায় চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চিঠি চালাচালি ও আইনি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে পড়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এতে করে ওই সড়কে চলাচলকারী তিন ইউনিয়নের কয়েক লক্ষ মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে পল্লীসড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাধীন ধরলা সেতুর এ্যপ্রোচ- যাত্রাপুর জিসি সড়কে ধরলা শাখা নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বসুন্ধরা এন্ড আবুবকর (জেভি) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই সেতুটি নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। পরবর্তীতে পাওয়ার অব অর্টনী (আম মোক্তারনামা)’র ক্ষমতাবলে মেসার্স আল- আমিন ট্রেডার্সেও সত্ত¡াধিকারী মো. গোলাম রব্বানী কাজটি শুরু
করেন। কিন্তু ঠিকাদারের সাথে এলজিইডি কর্র্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের আইনি জটিলতায় বর্তমানে সেতুর নির্মাণ কাজ মুখ থুবওে পড়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ অবর্ণনীয় বিড়ম্বনা নিয়ে ওই সড়কে যাতায়াত করছে।

ভুক্তভোগী ঠিকাদারের অভিযোগ, ডিজাইন পরিবর্তন, ক্যালকুলেশনসহ বিভিন্ন কারণে এলজিইডি নির্মাণ কাজ স্থগিত করেছিল। পরবর্তীতে টাইম এক্সটেনশন কওে কাজ শুরু করা হয় এবং প্রায় সত্তর শতাংশ কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারীকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধিসহ নিয়ন্ত্রিত জনজীবনের কারণে নির্মাণ কাজে কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়। বিষয়টি এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও তারা একতরফা সিদ্ধান্তে চুক্তি বাতিল করেন।

ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে রিট করলে মহামান্য আদালত এলজিইডি’র চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে দুই দফায় চার মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং কাজ শুরু কওে তা চলমান রাখার বিষয়ে রুল জারি কওে কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে আদালতের আদেশের কপি এবং কাজ শুরু করার আবেদন দিয়ে আমি পুনরায় সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করি। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পুলিশ পাঠিয়ে আমার কাজ বন্ধকরে দেয়। তাদেরকে আদালতের আদেশের কপি দিলেও তারা তাতে ভ্রæক্ষেপ করছেননা।’এই ঠিকাদার আরও জানান, ‘সময়মত কাজ শেষ না করার যে অভিযোগে আমার সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া করে এই কাজ শেষ
করতে তার চেয়ে আরও কয়েকগুণ বেশি সময় লাগবে। এতে করে জনভোগান্তি আরও বাড়বে। তাছাড়া নির্মাণ কাজে ১২টি গার্ডারের জন্য অনুমোদিত স্টেজিংয়ের ৮টি প্রস্তুত করা হয়েছে। মোট কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। এ অবস্থায় আমাকে কাজ করতে না দিলে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। তাছাড়া স্টেজিংগুলো সরিয়ে নিতে হলেও কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। ফলে কাজ চলমান না রাখলে জনভোগান্তি আরও প্রলম্বিত হবে।’ আদালতের নির্দেশনার পরও কাজ করতে না দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল বলে জনিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টেও আইনজীবী ও সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুরর হমান দুলু। আদেশের কপি দেখে তিনি জানান, ‘এই আদেশের ফলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তটি স্থগিত হয়ে গেছে এবং একই সাথে ওই ঠিকাদারের কাজ চলমান রাখতে আর কোনও বাধা নেই। কারণ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত অর্থ পূর্বেও কার্যাদেশ বহাল রয়েছে। এরপরও ঠিকাদারকে কাজ চলমান রাখতে না দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল।’

এ ব্যাপাওে কথা হলে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গোলাম রব্বানী ওই কাজের ঠিকাদার নন। তার সাথে আমাদের চুক্তিও নয়।’ তবে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী দাবি করেন, ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্বত্তাধিকারী হওয়ায় সেতু নির্মাণ কাজের সকল কাগজপত্রে তার সাক্ষর রয়েছে এবং এই কাজের বিপরীতে ব্যাংক তার অনুকূলে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা লোনও দিয়েছে। আর আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান দাবি কওে বলেন,‘ এই ধরণের কোনও নির্দেশনার কপি আমরা পাইনি।’

About admin

Check Also

চিলমারীতে দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতার ইউনিয়ন পরিষদ অংশ পাচ্ছেন না গ্রামপুলিশরা

চিলমারী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ কড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রামপুলিশদের (দফাদার ও মহল্লাদার) বেতন-ভাতার ইউনিয়ন পরিষদের অংশ দীর্ঘদিন ধরে না পাওয়ার …

বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কা, বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩

সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সামনে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে বাসের ধাক্কায় বাবা-ছেলেসহ ৩ যাত্রী নিহত এবং আরও …

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শহীদি মার্চ পালন

এস, এম হামিম সরকার নিরব, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শহীদি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *