শনিবার , এপ্রিল ২০ ২০২৪
Home / ধর্ম / আজ চিলমারীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী স্নান

আজ চিলমারীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী স্নান

গোলাম মাহবুবঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আজ শনিবার শুরু হচ্ছে তিন দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী স্নান। ব্রহ্মপুত্র স্নান উপলক্ষ্যে গত তিন দিন পূর্ব থেকেই চিলমারীতে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। দুর দুরান্ত থেকে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা চলে এসেছে চিলমারীতে। উপজেলার রাজারভিটা ঘাট থেকে শুরু হয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩কিলোমিটার এলাকাব্যাপী বালুর উপর তৈরী হয়েছে হরেক রকম পণ্যের ষ্টল। আসা শুরু করেছে বাইস কোপ,সার্কাসসহ নানান ধরণের খেলনার দোকান। নদের উপকুল ধরে বসেছে বিভিন্ন রকমের দোকান পাট। মাটির তৈরী হাড়ি-পাতিল,থালা,বদনাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পারিবারিক জিনিসপত্র তো আছেই। তার পাশাপাশি উঠেছে মাটির তৈরী বিভিন্ন দেব-দেবীর মুর্তি, পুতুল, বাঘ, আম,নৌকা ইত্যাদি। এ মেলায় মৃৎ শিল্প প্রাধান্য পেয়েছে দু’টি কারণে-প্রথমত; ধর্মীয় মতে মাটির দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে হবে বলে, দ্বিতীয়ত; দুর-দুরান্ত থেকে যারা আসেন তারা হাড়ি পাতিল বহন করে আনা পছন্দ করেন না।এসব কারণে হিন্দু পুন্যাথীরা যে দু‘তিন দিন ধর্মীয় কারণে চিলমারীতে অবস্থান করেন তারা অল্প পয়সায় মাটির বাসন কোসন কিনে তাদের প্রয়োজন মিটানোর পর ওগুলো ফেলে রেখেই চলে যান।
রণপাগলী সার্বজনীন পূজা মন্দিরের পুরহিত বুদ্ধদেব চক্রবর্তী জানান,স্নানের সময় অষ্টমী তিথী শুক্রবার রাত ৯টা ১১মি.১৬সে.থেকে শুরু হয়ে শনিবার রাত ১১টা ৮মি.৭সে.পর্যন্ত চলবে। তবে স্নানর উত্তম সময়(লগ্ন) শনিবার সকাল ৭টা ৩৫মিনিট ৩সেকেন্ড থেকে ১০টা ৩মিঃ ৫১সেকেন্ড পর্যন্ত। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ,চিলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি ডাঃ সলিল কুমার বর্মন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্যার্থীগণ অষ্টমী স্নান মেলায় আসবেন।এবারও প্রায় তিন‘লক্ষাধিক পূন্যার্থীর সমাগম হবে চিলমারী বন্দরের অষ্টমী স্নান মেলায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান,সরকারীভাবে অষ্টমী স্নান মেলা স্থলে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন,বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য নলকুপ স্থাপন, মহিলাদের কাপড় বদলানোর জন্য সরকারী,বেসরকারী ও এনজিওদের সহায়তায় ২শতাধিক তাবু থাকবে। নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও ভিডিপির পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করাসহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশী পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ বিকেলে জোড়গাছ বাজার, কাঁচকোল বাজার এবং পরদিন বালাবাড়ীহাটে মেলা বসবে।

১৯৪৫ সালে মনতলা নামক স্থানে নদীর উপকুল ঘেঁসে এই মেলাটি হতো।এ সময় এখানে ছিল চিলমারীর প্রাচীনতম নৌ বন্দর।চিলমারীর অষ্টমীর মেলাতে স্নান করার জন্য যারা আসতেন তাদের বিরাট একটি অংশ আসতো আসামের বিভিন্ন এলাকা থেকে।ওই এলাকা থেকে পুন্যার্থী তো আসতোই, তাছাড়াও আসতো প্রচুর জটাধারী সাধু সন্ন্যাসীরা।এছাড়াও তদানীন্তন পুর্ব বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পুন্যার্থীরা জীপ, মটর গাড়ী যোগে আসত চিলমারীতে।তবে দূর দূরান্তের পুন্যার্থীরা বেশীর ভাগ ট্রেন যোগে মহুকুমা শহর কুড়িগ্রামে আসার পর গরুর গাড়ীতে করে চিলমারীতে আসতো। আর সে কারণে গরুর গাড়ীর বিরাট বহর(৩ থেকে ৪ মাইল দীর্ঘ) দেখা যেত রাস্তায়।অষ্টমীর মেলার কোন পার্শ্বে ৫/৬ একর জমির মধ্যে এ সকল গরুর গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হতো। মনতোলা জায়গাটি বর্তমান যে জায়গায় রমনা রেল ষ্টেশন সেখান থেকে অনেক দুরে ছিল। যা এখন নদী গর্ভে।
যে কারণে অষ্টমীর স্নান
প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুল্ক পক্ষের অষ্টমী দিনে এই মেলাটি হয় বলে এই মেলাটির নামকরণ করা হয়েছে“অষ্টমীর মেলা”। জমদগ্নি ঋষির পুত্র ছিল ভূন্ডুরাম।হিন্দু শাস্ত্র ‘চৈতন্যম্মৃত’ মতে জানা যায়, এই জমদগ্নি ঋষির নিবাস স্থল ছিল বগুড়ার মহাস্থান গড়ে।তিনি খুব গুণী ঋষি ছিলেন। এক দিন জন্মদগ্নি ঋষি তার পুত্র ভূন্ডুরাম কে ডেকে বললেন ‘পুত্র, আমি কি তোমার পিতা? প্রশ্ন শুনে ভূন্ডুরাম অবাক হলেন এবং মাথা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললেন হ্যাঁ,অবশ্যই তুমি আমার পিতা। তখন জমদগ্নি ঋষী পুত্রের নিকট এসে অত্যন্ত সোহাগের সাথে সূধালো ‘আমি যদি তোমাকে কোন কঠোর নির্দেশ প্রদান করি,তা কি তুমি পালন করবে?’ পূর্বের মতো এবারেও ভূন্ডুরাম মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলে জমদগ্নি ঋষী পুত্রকে নির্দেশ দিলেন ‘যাও, এই মুহূর্তে কুঠার দিয়ে তোমার মাতা ও চার ভ্রাতাকে হত্যা কর’। পিতার এহেন অমানবিক নির্দেশ শুনে ভূন্ডুরাম কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেল। জমদগ্নি ঋষী পুত্রকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও বলেন ‘যাও পিত্রাদেশ পালন কর, নচেৎ তুমি আমার কঠিন অভিশাপে অভিশপ্ত হবে’। উপায় অন্ত খুঁজে না পেয়ে অবশেষে ভূন্ডুরাম কুঠারের আঘাতে মা ও অপর চার ভাইকে হত্যা করল। কিন্তু একি কুঠার তো আর হাত থেকে পড়ছে না। ভূন্ডুরাম তখন ঐ অবস্থায় পিতৃচরণে লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে লাগলো এবং বলতে লাগলো ‘পিতা আমি তো পিত্রাদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি, এবার তুমি তোমার গুণের বলে আমার মা ও চার ভ্রাতাকে জীবিত করে দাও। পুত্রের কান্না দেখে পিতার মন অবশেষে শীতল হল, ঋষী তার মৃত স্ত্রী ও চার পুত্রের জীবন দান করলেন। একটি সমস্যার সমাধান তো হলো বটে, কিন্তু ভূন্ডুরামের হাত থেকে কুঠার তো আর খুলছে না। আবার ভূন্ডুরাম পিতার চরণে মাথা রাখলেন, বললেন ‘পিতা আমার হাত থেকে কুঠার পড়ছে না’? তুমি মাতৃহত্যা করার পাপে অভিশপ্ত। অভিশাপ মোচন না হওয়া পর্যন্ত কুঠার তোমার পড়বে না বৎস। পুত্র ভূগুরাম পিতার চরণে পুনরায় মাথা ঠুকতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন হে পিতাঃ এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো কিভাবে তুমি বলে দাও‘। অবশেষে জমদগ্নি ঋষী বললেন, তুমি যদি এ অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাও, তাহলে তোমাকে ওই কুঠার হাতে নিয়ে সমস্ত পীঠস্থান ভ্রমণ করতে হবে এবং সমস্ত পীঠস্থান ভ্রমণ শেষে যেতে হবে কোশলের বিষ্ণুদশা নামে পরিচিত দ্বিজের নিকট। তবেই তিনি তোমার এ অভিশাপ মোচনের পথ দেখিয়ে দিবেন। কি আর করা? অবশেষে ভূন্ডুরাম পিতার পরামর্শ মত নিজ শরীরের সাথে আটকে যাওয়া অভিশপ্ত কুঠারটি নিয়ে চষে বেড়াতে লাগল গোটা ভারতবর্ষে যতগুলো পীঠস্থান আছে সর্বত্র। বিষ্ণুদশা ভূন্ডুরামের অভিশপ্ত হবার সমস্ত কাহিনী মনোযোগ দিয়ে শুনলেন এবং বললেন, যাও মানস্ সরবরে। সেখানে গিয়ে পর্বত কেটে হ্রদ সৃষ্টি কর।যে দিন তুমি হ্রদ কেটে সেই জলে স্নান করতে পারবে। ঐদিনই হবে তোমার মুক্তি।
ভূন্ডুরাম ছুটে চললো মানস সরবরে এবং সেখানে পৌঁছে পর্বত কাটতে লাগলো। এভাবেই দিনের পর দিন, রাতের পর রাত বিরামহীনভাবে পর্বত কাটতে কাটতে একদিন ব্রহ্মপুত্র হ্রদ সৃষ্টি হলো, জলের স্রোতে ডুবে গেল ভূন্ডুরাম। কথিত আছে যে, ভূন্ডুরাম পর্বতের পাদদেশে ডুবে যাবার পর চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ত্রি-স্রোতের মাঝে ভেসে উঠেন এবং তার হাত থেকে কুঠার পড়ে যায়। ভূন্ডুরাম মাতৃহত্যার অভিশাপ থেকে মুক্তি পান। ঐদিনটি ছিল চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথি। সেই থেকে এই ধর্মের অনুসারীগণ জীবনের সকল পাপ মোচনের জন্য প্রতি বছর নির্দিষ্ট এই দিনটিতে স্নানের জন্য ছুটে আসেন চিলমারীতে।(মহাভারত,পৃষ্ঠা-১০০৩ শেখক শ্রী কাশিরাম দাস)।

মেলায় পূন্যার্থীরা যা করেনঃ
এই দিনটিতে শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ের নরসুন্দররা চলে আসে স্নান কেন্দ্রে। তারা সবাই নদীর পানির নিকটবর্তী উপকন্ঠে বালুর উপর পীড়ি পেতে বসেন সারিবদ্ধ হয়ে। পুন্যার্থীরা সেলাই বিহীন বস্ত্র পড়ে (ধুতি) প্রথমে জলে নেমে শরীর ভিজিয়ে নেন এবং ভেজা শরীরে এসে কুশান পেতে বসে নর-সুন্দরের সামনে। অবশ্য মাথা নেড়ে করবার পূর্বে কিছু শাস্ত্রীয় ব্যাপার রয়েছে। এর জন্য পূণ্যার্থীকে সংগ্রহ করে আনতে হয় আগরবাতি, কলার কচি পাতা, বেল পাতা, ফুল, তুলশি পাতা, আতব চাল আর মালভোগ বা শবরী কলা। এসব একটি পাত্রে ঘেটে মেখে তৈরি করা হয় প্রসাদ। প্রতিটি নর-সুন্দরের পার্শ্বেই শাস্ত্রীয় দিকটি দেখবার জন্য একজন ব্রাম্মন থাকেন।এই দিকগুলি ঐ ব্রাম্মণরা করে থাকেন। যখন নর-সুন্দর ব্যক্তিটি মাথা নেড়ে করতে থাকেন তখন ব্রাম্মন নর-সুন্দর ব্যক্তিটিসহ পূণ্যার্থীর মাথার উপরে এবং শরীরে মন্ত্র পরে ঐ সকল ফুল, ঘাস ইত্যাদি ছিটিয়ে আত্মার শুদ্ধি করে থাকেন।এসময় অনেক পূর্ণ্যাথী আবার সমস্ত মাথা নেড়ে করে সামান্য একটু মাঝের চুল রেখে দিয়ে টিকি তৈরী করে সেখানে ফুল বেঁধে নেয়।অতঃপর পূণ্যার্থী জলে নামেন। অনেকে আবার জ্যান্ত পাঠাদান বা কবুতর উৎসর্গ করেন দেবদেবীর নামে।আবার অনেকে জলে নেমে পিন্ডিদান ও অস্থি নিক্ষেপ করে থাকেন।এই মেলায় আদ্য শ্রাদ্ধ করতেও আসেন অনেকে। হিন্দু মহিলারা আবার মাথা মুন্ডন করেন না। তারা জলে নেমে শাস্ত্র মতে কলার ঢাকনা দিয়ে তৈরি নৌকা ভাসিয়ে জলে ডুব দিয়ে এক ফেত্তা কাপড় মুড়িয়ে জল থেকে উঠে এসে কাপড় বদলিয়ে ব্রহ্মপুত্র স্নান সম্পন্ন করে থাকেন। এভাবেই হিন্দু সম্প্রদায় নানা ধরণের শাস্ত্রীয় দিক পালনের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র স্নান করে থাকেন। অষ্টমীর স্নানের পর অনেকে সাধু সন্ন্যাসীদের নিকট থেকে আর্শিবাদ গ্রহণ করেন। এসকল সাধু সন্ন্যাসীরা ভস্ম (চন্দন কাঠের গুড়া) গায়ে মেখে, অথবা ছাই মেখে রুদ্রাক্ষের মালা গলায় ঝুলিয়ে হাতে কপালে তীলক চিহ্ন একে ধ্যানে বসেন। পুন্যার্থীরা সাধু বাবার চরণে প্রণাম করে আশির্বাদ গ্রহণ করে থাকেন এবং তারা সাধু বা সন্ন্যাসীদেরকে বিনিময়ে দেন নজরানা হিসেবে টাকা পয়সা ইত্যাদি। অষ্টমীর স্নানের তারিখ আসবার এক মাস পূর্ব থেকেই এই জাতীয় সাধুদের ভীড় জমতে দেখা যায়।
এই মেলাটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন বরাবরই মেলা শুরু হবার কয়েক দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন রেল, নৌ এবং বাস ষ্টেশনগুলোতে দিবা রাত্রি পুলিশ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ করে পূন্যার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করেন। মেলার শান্তি শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি বৎসর অস্থায়ীভাবে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়ে থাকে। পূন্যার্থীরা যাতে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে তা নিশ্চিত করবার জন্য মেলার বিভিন্ন জায়গায় টিউবওয়েল বসানো হয়ে থাকে। বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থীদের থাকবার জন্য বিভিন্ন জায়গায় মেলা পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে তাবু খাটানো হয়। এই সকল তাবুতে সারা রাত ধরে চলে একনাম জপ ও কীর্তন। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ঢোল, ঢাক, বাঁশি, জুরি, তবলা, হারমনিয়াম বাঁজিয়ে হরিনাম জপতে জপতে ব্রহ্মপুত্র স্নানে আসেন। ব্রহ্মপুত্র স্নানে আসা পুন্যার্থীরা স্নান শেষে বাতাসা (ভেটি স্বরুপ) হরিলুট দিয়ে স্নানের সমাপ্তি ঘটায়।
চিলমারীর অষ্টমীর মেলায় নানান জাতি, নানান রং এর সাংস্কৃতিক সমারোহ, এখানে পুতুল নাচ চলে। অষ্টমীর মেলায় কুষাণ যাত্রা বা মেটো গান যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে এ মেলার। পুর্বে মেলাটি হত তিন দিন ধরে। আর এখন দীর্ঘ ৫ মাইল বিস্তৃত গরুর গাড়ীর বহর দেখা যায় না। গরুর গাড়ীর স্থান দখল করে নিয়েছে রিক্সা,ভ্যান, অটো,নছিমন আর মটর বাইক,রেলগাড়ী, এখন চিলমারীর রমনা বাজার পর্যন্ত আসে। কুড়িগ্রাম থেকে চিলামারী সেই বিস্তীর্ণ মেঠো পথে বসেছে খোয়া আর পীচ। সে পথে চলে চার চাকার বাস। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আজ চিলমারী অনেক পরিবর্তিত। কিন্তু দুঃখ শুধু একটিই আর তা হলো আধুনিকতার পরশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে লোক ঐতিহ্যমন্ডিত অষ্টমীর মেলার পুর্বের ইমেজ,দেশ বিভক্তির পর আজ চিলমারী বন্দর অবহেলিত, এলাকার হিন্দুরা চলে গেছে অধিকাংশই ভারতে। আজ যারা রয়েছে তারা অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু। তারপরও আজও মেলা হয়। আসে মানুষ। বাংলাদেশের আর অন্য জায়গার মেলা থেকে চিলমারীর অষ্টমীর মেলা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগামী শতাব্দীতে পা রাখবে। চিলমারীর সংগ্রামী জনতা প্রতি বছর এই দিনটিতে অসম্প্রদায়িকতার উজ্জ্বল পথিকৃৎ হয়ে প্রতীয়মান হবে সারা বাংলায়। ভূলে যাবে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র। চিলমারীর মানুষ এবার প্রমাণ করবে রাম-রহিমের সত্যিকারের চারণ ভূমি এই চিলমারী বন্দর।

About admin

Check Also

কুড়িগ্রামে পিক-আপে গানবাজনা ও বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোয় অর্ধশত মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রামে নিরাপদ ঈদ আনন্দ নিশ্চিত ও ঈদের দিনে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর দায়ে …

রৌমারীতে ১৭শ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ১ হাজার ৭১৫ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ একাধিক মাদক মামলার আসামি এনামুল …

উলিপুরে টাকার অভাবে নবজাতক বিক্রি, উদ্ধার করল পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রামের উলিপুরে টাকার অভাবে নবজাতক শিশুকে বিক্রির ঘটনায় ২ ঘন্টার মধ্যে উদ্ধার করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *