শনিবার , এপ্রিল ১৩ ২০২৪
Home / ধর্ম / শেরপুরের ঐতিহ্য মাইসাহেবা জামে মসজিদ

শেরপুরের ঐতিহ্য মাইসাহেবা জামে মসজিদ

আলমগীর হোসাইন

ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা শহরে পা রাখলে প্রথমেই যে পুরোনো ঐতিহ্য চোখে পড়বে তার নাম মাইসাহেবা মসজিদ। চোখ বন্ধ করে শেরপুরের নাম নিলেও এই মাইসাহেবা মসজিদটি ভেসে আসে দর্শনার্থীদের নজরে। পর্যটকদের কেউ শেরপুর যাবেন আর মাইসাহেবা মসজিদ দেখবেন না, এমন হয় না।

আনুমানিক আড়াইশ’ বছর আগে নির্মিত হয় মসজিদটি। তবে আধুনিক সংস্করণেও রয়েছে ঐতিহ্যের ছাপ। এর দুই পাশের সুউচ্চ ২টি মিনার চোখে পড়ে অনেক দূর থেকে। মাইসাহেবা মসজিদের সুউচ্চ মিনার শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা যায়। মসজিদ এলাকায় প্রবেশের জন্য রয়েছে বিশাল দৃষ্টিন্দন গেইট।

মসজিদটির নামকরণ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে একটি ঘটনা। শেরপুরের তিনআনি জমিদার মুক্তাগাছার ষোল হিস্যার জমিদারকে দাওয়াত করেন। দাওয়াতের উত্তরে মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরে একটি জায়গা চান যেখানে তিনি বিশ্রাম করবেন। সে সময় এখানে জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘরসহ পাশে আরেকটি ঘর ছিলো, জমিদার এলাকাটি মুক্তাগাছার জমিদারকে দেবেন বলে মনস্থির করেন এবং হাতি দিয়ে ঘরগুলো ভেঙে দেওয়ার আদেশ করেন। কিন্তু হাতিটি ঘর ভাঙতে ঘরের কাছে যায়, তখনই সালাম দিয়ে বসে যায়। অদ্ভুত এ খবর শুনে তিনআনি জমিদার এসে দেখেন ঘরের ভেতরে একজন নারী ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন। জমিদার বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে ফেরত যান। সেই নারীর নাম ছিল মাইসাহেবা। মাই সাহেবার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে মাইসাহেবা জামে মসজিদ নামকরণ করেন।

মাইসাহেবা মসজিদের প্রবেশপথ, ছবি: সংগৃহীত


মসজিদটি শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শেরপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। তিনআনি বাজার বা কলেজ মোড় থেকে জামালপুর বাস্ট্যান্ড রোডে প্রবেশ করতেই হাতের ডান পাশে ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি অবস্থিত। বিশাল এই মসজিদের সামনের অংশে অনেক জায়গা রয়েছে। এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। শেরপুর শহরে প্রবেশের পর যে কারও দৃষ্টি কাড়ে মসজিদটি।

মাইসাহেবা মসজিদে লোকজন প্রচুর দান করেন। এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও এখানে দান করেন নিয়মিত। দিনমজুর থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী, ভিক্ষুকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে দান করে তৃপ্তিবোধ করেন। বিশেষ করে এ রোডে চলাচলকারী পাবলিক পরিবহনের ড্রাইভাররা দিনের শুরু এবং শেষভাগে নিয়মিত দান করেন।

মসজিদটি তিনতলা ভবন। নিচতলা সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এখানে একসঙ্গে প্রায় ৯ হাজার মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রতি শুক্রবার জেলার বাইরে থেকে হাজার হাজার মুসল্লি জুমার নামাজের শরিক হতে আসেন।

মসজিদের ভেতরের অংশ, ছবি: সংগৃহীত


মসজিদের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ইমাম-মুয়াজ্জিনের বিশ্রামকক্ষ। মসজিদে আগত মুসল্লিদের অজুর জন্য মসজিদের দক্ষিণে ও উত্তরে দু’টি স্থান রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্রাব ও পায়খানার জায়গা।

একজন করে খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও তিনজন খাদেম মসজিদের কাজে নিয়োজিত আছেন।

মাইসাহেবা মসজিদে বয়স্কদের বিনামূল্যে কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। অসংখ্য বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর ২ ঘন্টা করে সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন ও তাজভিদ শেখেন।

মসজিদটি পাহারা দেওয়ার জন্য দু’জন লোক রয়েছেন। একজন মসজিদ কর্তৃপক্ষের অন্যজন পৌর কর্তৃপক্ষের। মসজিদসহ মসজিদ সংলগ্ন এলাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

About admin

Check Also

চিলমারীতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অসহায়, দুস্থ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে বিনামূল্যে হুইল চেয়ার বিতরণ করা …

চিলমারীতে বাংলাদেশ পুলিশের আয়োজনে গরীব ও দুস্থদের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ

আলমগীর হোসাইন, বাংলাদেশ পুলিশের আয়োজনে ও কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের সহযোগিতায় পবিত্র রমজানে গরিব ও দুস্থদের …

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভাই-বোন আটক

আমিনুল ইসলাম আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয় থেকেঃ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়য়িায় কানরে গোপন ডভিাইসসহ ভাই-বোনকে আটক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *