মোঃ মহসীন খান হীরা,মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে রাত সাড়ে দশটার দিকে মানিকগঞ্জের তরা কালিগঙ্গা সেতুর উপর সেলফি পরিবহনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই জন নিহত হয়েছেন। ময়নাতদন্তের পর ১৩ জুলাই বিকেলে দুজনের লাশ দাফন করা হয়েছে এ সময় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে শত শত মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়ে। আরেক জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
১৩ জুলাই বুধবার দুপুরে নিহত আশিকুর রহমানের বাবা মহিদুর রহমান বাদী হয়ে ঘিওর থানায় মামলা করেছেন।
১২ জুলাই মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে কালিগঙ্গা ব্রিজের উপরে সেলফি পরিবহন ও মোটরসাইকেল এর সাথে দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন, মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জুয়েল মিয়া (২৪) এবং মোটর পার্টস ব্যবসায়ী মো. আশিকুর রহমান (২৫)।
আহত হাসিবুর রহমান অটুট (২৪)। আশিকুর ও হাসিবুরের বাড়ি ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামে। অপর নিহত জুয়েলের বাড়ি গিলন্ড গ্রামে। সে রাথুরা গ্রামে নানার বাড়ি বসবাস করতো।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পাটুরিয়াগামী সেলফি পরিবহন কালিগঙ্গা সেতুর উপর চলন্ত একটি মোটর সাইকেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এসময় ঘটনাস্থলে মারা যায় জুয়েল ও আশিকুর। আহত হাসিবুরকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী মুন্নু মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার এবং বাসটি জব্দ করে পুলিশ।
এদিকে দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী মহাসড়কের তরা এলাকায় সেলফি পরিবহনের অপর দুটি বাস ভাঙচুর করেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে উত্তেজিত জনতা সেখান থেকে পাশ্ববর্তী বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চলে যান। সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কের বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে রাত সোয়া এগারোটার দিকে ঢাকাগামী সেলফি পরিবহনে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বানিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছায়। এস আর আনসারী বিল্টু বলেন দূর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনগনকে মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি । কিন্তু বিক্ষিপ্ত জনগণ তখন সরে না যাওয়ায় পুলিশের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে লোকজনদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয় । এ সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভালো ভূমিকা রাখেন।
এ ঘটনায় রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। মহাসড়কের এক লেন দিয়ে উভয় দিকের যানবাহন চলাচল শুরু হয়। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসের আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন ঘিওর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাসচাপায় দুই জনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। দুজনের লাশ জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
১৩ জুলাই বুধবার ঘিওর থানায় নিহত আশিকুর রহমানের পিতা মহিদুর রহমান সেলফি পরিবহন এর বিরুদ্ধে মামলা করেন
এদিকে অজ্ঞাত কারণে বুধবার সকাল থেকে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে সেলফি পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক সমিতির কর্তৃপক্ষ।
সেলফি পরিবহন ও মোটরসাইকেলের দূর্ঘটনার পর রাত সাড়ে বারোটার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ। এ সময় তিনি দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সেলফি পরিবহন পরপর কয়েকটি দূর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারকে জানিয়েছি। এই পরিবহন যদি নিয়মের মধ্যে না আসে তাহলে তাদের রুট পারমিট বাতিলের ব্যবস্থা করা হবে।