খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ওএমএস-এর মাধ্যমে ২ হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রে ২ টন ও প্রতিটি ট্রাক সেলে সাড়ে ৩ মেট্রিক টন করে চাল বিক্রি শুরু করা হবে। একটি মহল সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার লক্ষে চালের মূল্য নিয়ে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নওগাঁয় সার্কিট হাউসে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং টিসিবির কার্ড হোল্ডারদের মধ্যে চাল ও আটা বিতরণ উপলক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের সকল অপতৎপরতা নস্যাৎ করে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনবান্ধব সরকার সব কিছুই করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শেই আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব এবং টিসিবি’র কার্ডহোল্ডারদের মধ্যে নায্যমূল্যে চাল ও আটা বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।
দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে বাজারে চালের মূল্য কেজি প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোক্তাদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করেই সারাদেশে মানবিক এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, সারাদেশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে এবং এই কার্যক্রম ৩ মাস ধরে চলমান থাকবে।
“খাদ্য বান্ধবের ক্ষেত্রে ডিভাইসের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পুরোপুরি কাজ শেষ হলে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে, এতে করে কেউ অবৈধভাবে ব্যবহার করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ যেন একাধিক বার চাল নিতে না পারে সেজন্য টিসিবির কার্ডধারীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। প্রতি কার্ডধারীকে মাসে ৫ কেজি করে দুইবার চাল দেওয়া হবে। এছাড়াও কার্ডধারী ছাড়া যারা চাল নিতে যাবে তাদেরকে ভোটার আইডিকার্ডের ফটোকপি নিয়ে যেতে হবে। সেটার উপর তারিখ ও সিল দেয়া থাকবে। যাতে কেউ বার বার চাল নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে না পারে।”
অপরদিকে, ঢাকা মহানগরে ৫০টি ট্রাকে উন্মুক্তভাবে চাল বিক্রি করা হবে। ট্রাকসেল কর্মসূচিতে প্রতিদিন প্রত্যেকটি ট্রাকে ২ মেট্রিক টন করে চাল ওএমএস-এর আওতায় বিক্রি করা হবে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী আরও বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ শতভাগ। দেশে চালের কোন অভাব নেই। দেশে বর্তমানে ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫৩১ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্যশষ্য সংগ্রহ অভিযানের আরও দু’দিন বাকী রয়েছে। অর্থাৎ এ দু’দিনে আরও ৫০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সংগৃহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
“তেলের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে তার চেয়ে দ্রব্যমূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই এবং অসৎ ব্যবসায়ীরাই এ কাজটা করছে। এটা নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং করা হয়েছে। যেখানে মজুদ পাওয়া যাচ্ছে জরিমানা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওএমএস ও টিসিবি দিয়ে কম দামে পণ্য দেয়ার চেষ্ট করছে সরকার।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যে চালগুলোর অর্ডার দিয়েছি সবগুলোই আসবে আশা করিনা। যার কারণে বেশি করে চালের অর্ডার দেয়া হয়। আমদানি শুল্ক যখন ২৫ শতাংশ ছিল তখন কিন্তু ৫০ মেট্রিক টন চাল দেশে এসেছে। অর্ডার দেয়া হয়েছিল প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন।
কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে খরচ দিয়ে চাল প্রতি কেজি দুই টাকা বেশি পড়ে যায় এর জন্য আনে নাই। আশা করি, আরও ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে দেওয়ায় কেজিতে প্রায় পাঁচ টাকা কম আসবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, খাদ্যমন্ত্রীর একান্ত (উপসচিব) সচিব মো. শহিদুজ্জামান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবিরসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।