এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর সদর আসনে (রংপুর-৩) ২৮ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটল জাতীয় পার্টির। এখন থেকে এই আসনে হাল কে ধরবেন—শোকের পাশাপাশি এই আলোচনাও শুরু হয়েছে। দলীয়ভাবে এখনও প্রার্থী চুড়ান্ত না করলেও ঘুরে ফিরে তিন জনের নাম বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।
জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, আপাতত এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে প্রার্থী করে আসন হারানোর ঝুঁকি নিতে চায় না সদ্য অভিভাবক হারানো দলটি। এরশাদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দুইজনের নামে এই মুহূর্তে আলোচনা হচ্ছে। তারা হলেন এরশাদের ভাই হুসেইন মুহাম্মদ মোর্শেদ এবং এরশাদের ছেলে রাহগীর আলমাদি সা’দ এরশাদ। সাদ এরশাদ দীর্ঘ মালয়েশিয়া প্রবাস জীবন শেষে এখন রাজধানী ঢাকাতেই থাকেন। সাদ এখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে তাকে প্রার্থী করার কথাও ছড়িয়েছিল।
এছাড়া এরশাদের ভাতিজা সাবেক সাংসদ এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ এর নামও আলোচনায় রয়েছে। এরশাদের এই ভাতিজা রংপুরের গঙ্গাচড়া-১ আসন থেকে এর আগে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত বছর রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন শাহরিয়ার আসিফ। সেই সময় তাকে জাতীয় পার্টি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে এরশাদ পরিবারের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে সে তালিকায় প্রথমে রয়েছে রংপুর জেলা জাতীয়পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর। তিনি গত নির্বাচনে রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসন থেকে লাঙ্গল প্রতিকে নির্বাচন করে আ.লীগ প্রার্থী আশিকুর রহমানের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়।
তবে দলের চেয়ারম্যানের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগে এ নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে নারাজ ওই আসনের প্রার্থিতাপ্রত্যাশী ও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
জানাগেছে, এরশাদের অবর্তমানে রাজনৈতিক যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা অপূরণীয়। তবে এরশাদকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা দেখা গেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। কারণ ১৯৯১ সাল থেকে রংপুর সদরের মানুষ এরশাদকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে আসছে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের মধ্যে এরশাদের জনপ্রিয়তা ছিলো আকাশচুম্বী। সদর আসন জাতীয় পার্টির আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। জোটগত নির্বাচনের কারণে গত তিনটি নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে এরশাদই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। দলের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এখানে আওয়ামী লীগ কিংবা অন্য কোনো দল সুবিধা করতে পারবে না।
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ মনে করছে, এরশাদের অবর্তমানে সদর আসন আর জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হবে না। দীর্ঘদিন থেকে রংপুর সদর আসনটি এরশাদ দখল করে রেখেছিলেন। তিনি এলাকায় না থাকার কারণে এখানকার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আগামীতে এখানে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির সদস্য রংপুর সদরের মানুষ চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি দোয়া করি এরশাদ সাহেবকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন। উপনির্বাচন হলে সে ক্ষেত্রে আমি বলব রংপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগের একজন যোগ্য প্রার্থী দেওয়া হোক।’
এদিকে জাতীয়পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বুধবার বনানীর কার্যালয়ে একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যেই প্রেসিডিয়াম বৈঠকে রংপুর-৩ আসনের নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।