ইমন দাস, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
বরগুনায় স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার এ মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে নেওয়া হয়। এ সময় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়ায়নি। মিন্নির পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী না থাকার বিষয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করছে। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেন, তিনি মিন্নিকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দীন, গোলাম সরোয়ার নাসির ও গোলাম মোস্তফা কাদেরকে নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু আদালতে কেউই তার মেয়ের পক্ষে কথা বলেননি। তিনি আরও কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন তার মেয়েকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা বলেছেন, তাদের পক্ষে মিন্নির জন্য আইনি সহায়তা দেওয়া সম্ভব নয়। মিন্নির বাবার দাবি, কোনো প্রভাবশালী অথবা ক্ষমতাসীন লোকের কারণে তার মেয়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে কথা বলতে পারেননি। তবে আইনজীবী জিয়া উদ্দীন জানান, মিন্নির বাবা তার কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছেন, তিনি তাকে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলেছেন। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে না পারায় আদালতে দাঁড়াতে পারেননি। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি। মিন্নির বাবার দাবি, কী ধরনের কাগজপত্র লাগবে, তা তিনি জানেন না। তারা তাকে পরামর্শ দিলে সেভাবে কাজ করতেন।বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারি আসলাম বলেন, আসামির পক্ষে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে না- এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের সমিতিতে হয়নি। আইনি সহায়তা পাওয়া একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কোনো আইজীবী নিয়োগ না করেও লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী আইনি সহায়তা পেতে পারেন। মিন্নির বাবাকে কেউ আশ্বাস দিয়ে পরে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ পেলে তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন।মিন্নিকে আইনি সহায়তা না দেওয়ার ওই পোস্ট আইনজীবীদের প্রভাবিত করেছে কি-না জানতে চাইলে সুনাম দেবনাথ বলেন, ওই স্ট্যাটাসটি দেওয়ার সময় মিন্নি মামলার এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন। আর তিনি ঘটনায় জড়িতদের আইনি সহায়তা না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার মানে এই নয় যে, কেউ আসামিদের সহায়তা দিতে পারবে না বা বাধ্যবাধকতা ছিল। এটা তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না।মিন্নির পক্ষে আইনজীবী না থাকার পেছনে পুলিশের কোনো বাধা ছিল কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এসপি মারুফ বলেন, মিন্নির পরিবার চাইলে আদালতের সহায়তা নিয়ে আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারতেন। তার জানা মতে, তিনি আদালতের শরণাপন্ন হননি।গত ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাত শরীফকে। এ ঘটনায় পরের দিন ২৭ জুলাই ১২ জনের নাম উল্লেখ করে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।ওই মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত সাতজন এবং জড়িত সন্দেহে সাতজনসহ মোট ১৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে।এ পর্যন্ত গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে এজাহারভুক্ত চারজন এবং জড়িত সন্দেহে ছয়জনসহ মোট ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি তিনজনকে পুলিশ বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।