খনিতে ঘাটতি হওয়া কয়লার মূল্য বাবদ ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযেগে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
খনির কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান কর্তৃক দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে পেশ করা হলে রোববার কমিশন সেটি চার্জশিট হিসেবে অনুমোদন দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক মো. সামছুল আলম শিগগির চার্জশিটটি আদালতে পেশ করবেন। এরপর এই মামলার বিচারকার্য শুরু হবে।
জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝিতে খনিতে কয়লা ঘাটতির খবর প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে। গণমাধ্যমের ওই খবর অভিযোগ হিসেবে আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের এই অনুসন্ধান পর্যায়ে ২৩০ কোটি টাকা মূল্যের ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা ঘাটতির অভিযোগে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বাদী হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন গত বছরের ২৪ জুলাই। খনির সাবেক এমডি হাবিব উদ্দিন আহমেদসহ সংশ্নিষ্ট ১৯ জনকে আসামী করা হয়েছিল এই মামলায়।
পরে ওই মামলাটি তদন্তের জন্য পাঠানো হয় দুদকে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুদক উপ পরিচালক মো. সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম এক বছর ধরে মামলাটি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ জনকে আসামীর সুপারিশ করে কমিশনের প্রতিবেদন পেশ করা হয়। কমিশন প্রতিবেদনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গতকাল চার্জশিটের অনুমোদন দেয়।
চার্জশিটে বলা হয়, ওই ২৩ জন আসামি পরস্পর যোগসাজসে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০০৬ সালের জানুয়ারী গত বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত সময়ে ঘাটতিকৃত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লার মূল্য বাবদ ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ দশমিক ৮৪ টাকা আত্মসাত করেছেন। তারা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯, ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের আলোকে খনির কর্মকর্তা কর্তৃক দায়ের করা মামলার পাঁচ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত পর্যায়ে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই মামলার মোট আসামীর বাইরে সংশ্নিষ্ট অন্যদেরকে আসামি করা হয়েছে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা ২৩ আসামির মধ্যে বিসিএমসিএলের সাবেক সাত এমডি হলেন- মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মো. আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এস.এম.নুরুল আওরঙ্গজেব ও প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহাম্মদ।
বাকি ১৬ জন আসামি হলেন-কোম্পানির সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশানন) মো: শরিফুল আলম, মো. আবুল কাসেম প্রধানীয়া, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন বিভাগ) আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান চৌধুরী, নিরাপত্তা শাখার সাবে ব্যবস্থাপক সাবেক মাসুদুর রহমান হাওলাদার, সৈয়দ ইমান হাসান, সাবেক ব্যবস্থাপক (মেইনন্টেনেন্স এন্ড অপারেশন) মো. আরিফুর রহমান, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপক (মেইনন্টেনেন্স এন্ড অপারেশন) মো: মোর্শেদুজ্জামান, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মো. হাবিবুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) মো: জাহেদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মন, সহকারী ব্যবস্থাপক (পি.এম) মো. মনিরুজ্জামান, ব্যবস্থাপক, (কোল হ্যান্ডেলিং ম্যানেজমেন্ট) মো. শোয়েবুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর ডিপার্টমেন্ট) এ.কে.এম খালেদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হালদার ও মোঃ জোবায়ের আলী উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট)।
যারা অব্যাহতি পেলেন-ব্যবস্থাপক (এপপ্লোরেশন) মো. মোশারফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কন্সট্রাকশন এন্ড মেইনন্টেনেন্স) জাহিদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক ) মো. একরামুল হক (সেইফটি ম্যানেজমেন্ট), মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী সাবেক মাহব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) ও গোপাল চন্দ্র সাহা মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব-চ.দা.)।