আলমগীর হোসাইনঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পানি চারদিকেই থৈ থৈ পানি। বসতভিটায় বানের পানি নেই খাওয়ার পানি। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন, উঁচু সড়ক, বাঁধ রাস্তা, আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা বাসাবাড়ির ছাদে। চারদিকে পানি আর পানি। তারপরও খাওয়ার মতো বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাহাকার। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। নেই থাকার জায়গা এর উপর আবার রয়েছে চরম খাদ্য সংকট। মানুষের মতো দুর্ভোগে পড়েছে গবাদিপশুও। বানভাসিদের দুর্ভোগ এখন চরমে। উপজেলার চারদিকে শুধু নেই আর নেই। সব কেড়ে নিয়েছে আকস্মিক বন্যা। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন অনেকেই নিস্ব। গ্রামের পর গ্রাম গিলে আছে বানের পানি। ডুবেছে টয়লেট, টিউবওয়েল, বীজতলা আর সবজি ক্ষেত। গত ১০ই জুলাই থেকে আকস্মিক বন্যায় দুর্ভোগের আগমন। ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চল থেকে পুরো চিলমারী গ্রাস করে বন্যার পানি। ভেঙে দেয় সড়ক, বাঁধ, ব্রিজ, রেললাইন। বিচ্ছিন্ন করে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে বন্যা গ্রামের মতো শহরের বাসিন্দাদেরও দুর্ভোগের অবস্থা আরো ভয়াবহ করে দেয়। শহরের বন্যাকবলিত এলাকার প্রতিটি বাসাবাড়ির টিউবওয়েল, ল্যাট্রিনসহ সব কিছু তলিয়ে যায়। এ ছাড়াও বাসাবাড়ির পাম্প তলিয়ে যাওয়ায় ট্যাংকে রিজার্ভ রাখার ব্যবস্থাও এখন অচল। কারণ বন্যাকবলিত শহর ও গ্রামের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। তাই খাওয়ার বিশুদ্ধ পানির যেমন চরম সংকট তেমনি গোসল, রান্নাবান্না ও প্রয়োজনীয় কাজের ব্যবহারের জন্য মিলছে না পানি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন অতীতের সকল বন্যার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবারকার বন্যা। খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির সংকট স্বীকার করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী সরকার বীর বিক্রম বলেন আমরা বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার চেষ্টা করছি তবে এবারে ১৯৮৮ সালে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল এবারকার বন্যা তার চেয়েও ভয়াবহ। উপজেলা আবাসিক ও সদরের বাসিন্দারা জানান আকস্মিক বন্যা হওয়ায় চোখের সামনেই সবকিছু তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে অনেকের ঘরে খাদ্য থাকার পরও পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় তারা অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করছেন। গ্রাম কিংবা শহরে গাড়ি চলাচলের রাস্তায় ৩ থেকে ৫ ফুট পানি থাকায় সেখানে নৌকা চলাচল করছে। প্রায় বাড়ি থেকে নৌকা কিংবা ভেলা ছাড়া বের হওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা আবাসিক এলাকার একতলার বাসিন্দারা বাসার ছাদে কিংবা অন্যান্য উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। শহর এবং গ্রামের বন্যাকবলিত মানুষজন বানের পানি ঠেলে পায়ে হেঁটে অথবা নৌকাযোগে দূরদূরান্ত থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছেন। তবে অনেক এলাকায়ই বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বানের পানিই তাদের একমাত্র সম্বল। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় আকস্মিক বন্যায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের শতভাগ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এ পর্যন্ত ১১০ টন বরাদ্দকৃত চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। খোলা হয়েছে ৮১টি আশ্রয় কেন্দ্র। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ৭টি মেডিকেল টিম বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে।