রাজধানী ঢাকার বাইরেও বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই বাড়ছে এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৮ জনে।
এ ছাড়া কয়েকদিনে ময়মনসিংহে ২২, বগুড়ায় আরও ১১, নোয়াখালীতে ৩৩, পাবনায় ৩০, লক্ষ্মীপুরে ছয়, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ১৩ এবং শেরপুরে তিনজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। সব মিলিয়ে এই আট জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৪। ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
খুলনা: জেলায় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আরও ১৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই পর্যন্ত খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২১ জন। প্রতিদিনই কেউ না কেউ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন।
খুলনার সিভিল সার্জন এ এম এম আবদুর রাজ্জাক জানান, খুলনায় এ পর্যন্ত ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৮ জন চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে পাঁচজন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, চারজন খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে খুলনায় কেউ মারা যায়নি। তিনি জানান, আক্রান্ত অধিকাংশই ঢাকা থেকে আসা রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনার সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. ফেরদৌসী আকতার জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৭১ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহ: গত কয়েকদিনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে কেউ আক্রান্ত হয়নি। ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহে আসার পর তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বগুড়া: বগুড়ায় নতুন করে ডেঙ্গু নিয়ে আরও ১১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে এবং বাকি আটজন বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে তিনজন উন্নত চিকিৎসা নিতে ঢাকায় গেছেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এক চিকিৎসকসহ ২৮ নারী-পুরুষ শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তারা সবাই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনের বাড়ি বগুড়ায়। বাকি ১৪ জন জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁর বাসিন্দা।
পাবনা: গত তিন দিনে পাবনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অন্তত ৩০ ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ১২ জন রোগী। এসব রোগীর প্রায় সবাই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু নিয়ে এসেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রঞ্জন কুমার দত্ত বলেন, আমরা ইতিমধ্যে একটি হেল্পডেস্ক খুলেছি এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।
পাবনার সিভিল সার্জন মির্জা মেহেদী ইকবাল বলেন, আমরা পাবনা শহরের মশা পরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা করেছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। বরাদ্দ ও নির্দেশনা পেলে কাজ শুরু হবে।
নোয়াখালী: গত কয়েকদিনে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলার ১০ জনসহ ৩৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। তারা সবাই ঢাকা থেকে আসা। শনিবার সকাল পর্যন্ত নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ১০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম। নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন মমিনুর রহমান জানান, হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। যেন আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা দিতে পারে।
বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ): বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। চলতি সপ্তাহে ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে চারজনই বাজিতপুরের। বাকিরা অন্য এলাকার। গত দুই মাসে এ হাসপাতাল থেকে আরও ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। হাসপাতালের চিকিৎসক সেলিম জানান, এসব ডেঙ্গু রোগীর বেশিরভাগই ঢাকা থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা যায়নি।
লক্ষ্মীপুর: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ছয়জন ভর্তি হয়েছেন। শনিবার বিকেল পর্যন্ত এসব রোগী শনাক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হোসেন আহমেদ নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শেরপুর: জেলা সদর হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের আরএমও খায়রুল কবির সুমন বলেন, ভর্তি সবাই ঢাকায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা বর্তমানে ভালো।