নাদিরা খানম তুলি,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার পর পুলিশ সদর দপ্তরে লেখা ফেনীর তৎকালীন এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের একটি আলোচিত প্রতিবেদন আদালতে তলব করার আবেদন জানিয়েছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
রোববার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এই আবেদন দাখিল করা হয়। আদালতে এদিন মোট ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের শুরুতে আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু তদন্তের স্বার্থে সাবেক এসপির প্রতিবেদনটি তলব করার আবেদন জানান। নুসরাত হত্যার পর এসপি পুলিশ সদর দপ্তরে জানান, নিহতের পরিবার মামলা দায়েরে আগ্রহী ছিল না। তারা এজাহারও পরিবর্তন করেছে। অভিযোগ রয়েছে এসপি জাহাঙ্গীর সোনাগাজীর তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। ইতিমধ্যে ওই ওসিকে গ্রেফতার ও এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
একই পিটিশনে একজন পিবিআই কর্মকর্তার একটি সংবাদপত্রে দেওয়া মন্তব্যকে আদালত অবমাননা হয়েছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রার্থনা করা হয়। পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাঈন উদ্দিন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে মন্তব্য করেছেন, নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষীদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তার এমন মন্তব্যে আদালত অবমামনা হয়েছে দাবি করে তিনি আদালতের কাছে এর প্রতিকার চান। পিটিশনে নুসরাত হত্যা ঘটনায় সোনাগাজী থানায় পুলিশের বাদী হয়ে দাখিল করা জিডিও তলব করার আবেদন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ আগামীকাল সোমবার এ ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এদিন নুসরাত হত্যা মামলার ৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ দিন আদালতে মূল সাক্ষ্য দিয়েছেন ফেনী কারাগারের জেল সুপার রফিকুল কাদের, ডেপুটি জেলার মনির হোসেন ও ৩ কারারক্ষী। আদালতে ডেপুটি জেল সুপার ও কারারক্ষীরা জানায়, নুসরাত হত্যার আগে ১ এপ্রিল আসামি নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, ইমরান, আবদুল কাদের ও ৩ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসাইন, সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, ইফতেখার উদ্দিন রানা ও শাহাদাত হোসেন শামীম অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করে। এ সময় মনির উদ্দিন আদালতে কারাগারের একটি রেকর্ড বই উত্থাপন করেন। আদালত রেকর্ড বইটি জব্দ করার আদেশ দেন।
পিপি হাফেজ আহাম্মদ ও বাদী পক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, সোমবার আদালত নিহত নুসরাতের বাবা মাওলানা একেএম মুছা ছাড়াও মুহাম্মদ আলী ও সৈয়দ সেলিমকে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য হাজির রাখার আদেশ দিয়েছেন।
গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের শরীরে আগুন দিলে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ২০ জুন থেকে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত ৫৮ জনের সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী মাসেই রায় হতে পারে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।