একরাম হোসাইন রিটু,ফেনী জেলা প্রতিনিধিঃ
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বাবা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সময় তিনি একমাত্র মেয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদালতের বিচারক তাকে সান্ত্বনা দিয়ে কন্যা হত্যার ন্যায়বিচারের স্বার্থে শান্ত হয়ে জবানবন্দি দিতে অনুরোধ করেন। এ সময় আদালতে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। উপস্থিত অন্যদের চোখও ভিজে যায়। নুসরাতের বাবা সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাদী ও বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ও পর্যবেক্ষকরা।
সোমবার দুপুরে নুসরাতের বাবা মাওলানা এ কে এম মুসার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। এর আগে পুলিশ ১৬ আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করে।
নুসরাতের বাবা জবানবন্দিতে বলেন, তিনিও একজন মাদ্রাসাশিক্ষক। আরেক মাদ্রাসাশিক্ষক সিরাজ-উদ-দৌলা ২৭ মার্চ তার মেয়ে নুসরাতকে কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি করে। এ সময় নুসরাতের দুই বান্ধবী কক্ষের সামনে উপস্থিত ছিল। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে সিরাজ গ্রেফতার হয়। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষের লোকজন তার মুক্তির দাবিতে মিছিল ও মানববন্ধন করে। এতে নুসরাত মানসিকভাবে কষ্ট পায় এবং বিচার পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। তবে নুসরাত এর শেষ দেখে যাবে বলে পরিবারকে জানায়।
এরপর ৬ এপ্রিল নুসরাত আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তার শরীরে আগুন দেওয়ার বর্ণনা দেন হতভাগ্য বাবা। তিনি বলেন, ‘আগুনে নুসরাতের হাত-পা পুড়ে মাংস খসে যায়।’ এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাওলানা মুসা। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
আদালতের বিচারক এ সময় তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘এখানে যারা উপস্থিত আছেন, সবাই সন্তানের পিতা। আমারও একটি মেয়ে আছে। আমরা সবাই ন্যায়বিচারের জন্য অংশ নিয়েছি। আপনি শান্ত হয়ে ঘটনা বর্ণনা করেন।’ তাকে শান্ত করতে বিচারক ও বাদীপক্ষের আইনজীবীদের হিমশিম খেতে হয়।
পরে নুসরাতের বাবাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু জানান, সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আদালত নুসরাত হত্যার পর তৎকালীন এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার পুলিশ সদর দপ্তরে ওসি মোয়াজ্জেমের অপতৎপরতার পক্ষে সাফাই গেয়ে যে প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন, তার ওপর শুনানি হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।
বিপাকে আসামিপক্ষের আইনজীবী : সোমবার পিবিআইর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদনের শুনানি হয়। এ সময় বিচারকের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু তার আবেদনটি উপস্থাপিত হয়নি মর্মে প্রত্যাহার করে নেন। বিচারক এ সময় নান্নুর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার বিচারকাজ প্রভাবিত হতে পারে- এমন কোনো মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেওয়া হবে।