রফিকুল ইসলাম মানিক, স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঘুষের টাকার তথ্য গোপন করে ঘরে রাখার অভিযোগে মামলার পর সিলেট কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিককে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নেয়। বিচারক কে এম ইমরুল কায়েসের আদালতে শুনানি শেষে পার্থকে কারাগারে পাঠানো হয়।
রোববার ঢাকার কলাবাগান থানার ভূতের গলিতে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের পর সোমবার দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে কমিশনের ঢাকা-১ কার্যালয়ে মামলা করেন।
পার্থ এর আগে চট্টগ্রাম কারাগারে ডিআইজির (প্রিজন) দায়িত্বে ছিলেন। এই কারাগারে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে পার্থের বাসায় ঘুষের টাকা আছে বলে তথ্য পান কমিশনের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। ওই তথ্যের ভিত্তিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাসা তল্লাশি করে ওই ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত গণমাধ্যমকে বলেন, পার্থের বাসা থেকে উদ্ধার করা ৮০ লাখ টাকার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম কারাগারে থাকার সময় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নিজের ঘরে রাখা নগদ অর্থের তথ্য পাওয়া যায়। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে ওই টাকা তার বলে স্বীকার করেছেন পার্থ গোপাল বণিক। সচিব আরও বলেন, এই ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পার্থের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গ্রেফতারের সময় পার্থ দুদক কর্মকর্তাদের বলেন, ওই ৮০ লাখ টাকা তিনি বৈধভাবে অর্জন করেছেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন। চাকরিকালীন তিনি বৈধ আয় থেকে জমা করেছেন বাকি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেন, তার ঘোষিত আয়কর ফাইলে ওই ৮০ লাখ টাকার ঘোষণা পাওয়া যায়নি। ওই টাকা অবৈধভাবে অর্জন করা হয়েছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম পার্থের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের আলাদা আরও একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। এরই মধ্যে তার নামে-বেনামে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এই অনুসন্ধান শেষে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহবুবুল আলম ও দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।
জানা গেছে, পার্থ চট্টগ্রাম কারাগারে ডিআইজি (প্রিজন) পদে যোগ দেন ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট। কারাগারের নানা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ও প্রায় পাঁচ কোটি টাকার শেয়ারসহ চট্টগ্রামের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসকে ভৈরব রেলওয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তিনি দাবি করেন, ওই টাকার মধ্যে পাঁচ লাখ তার নিজের ও ৩৯ লাখ টাকা পার্থ গোপাল বণিকের। ওই ক্লু থেকে পার্থের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।