আবু জাফর সোহেল রানা, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌ-বন্দরে ২টি পাথর বোঝাই ট্রলার খালাসের অপেক্ষায় ১৪দিন ধরে আটকে আছে। ভুটান থেকে পাথর নিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরি বন্দর থেকে ছেড়ে আসা বাংলাদেশের আফসা এন্টারপ্রাইজ ও মুকুল এন্টারপ্রাইজ নামের ট্রলার দুটি বর্তমানে বন্দরের ব্রহ্মপুত্র নদের চ্যানেলে অবস্থান করছে।
চিলমারী নৌ-বন্দর পুন:চালুর পর ভুটান থেকে বৈধপথে ৫’শ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে আসা ট্রলার দুটি খালাসের অপেক্ষায় আটকে থাকলেও রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা আকতার হোসাইন ট্রলার দুটিকে আটকে রাখা হয়নি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, সাময়িকভাবে ট্রলার দুটিকে ‘চলৎশক্তিহীন’ করে রাখা হয়েছে। কাগজ পত্র ঠিক থাকলে ছেড়ে দেয়া হবে।
এ দিকে ট্রলার দুটি টানা ১৪দিন ধরে আটকে থাকায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে তাদের।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নৌ পথে মালামাল পরিবহনের জন্য একটি নৌ-প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা থেকে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ পথ চালু ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও নৌ পথের উন্নয়ন না হওয়ায় বন্দরটি অচল পড়ে।
২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিলমারী সফরকালে চিলমারী নদীবন্দরকে পুনরায় চালুর ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ১৭ দিনের মধ্যে নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি চিলমারী নদীবন্দরের পুননির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। একই বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ১০ একর এলাকাকে নদীবন্দর ঘোষণা করে সরকারিভাবে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরমধ্যে যাত্রীবাহী ফেরিঘাটের জন্য রমনা ঘাট এলাকায় ২.৫ একর ও পণ্যবাহী ঘাটের জোড়গাছ পুরাতন বাজার এলাকায় ৭.৫ একর জায়গা গেজেটভূক্ত করা হয়। এরপর বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দর ঘাটে যাত্রী ও মালামাল উঠা-নামার শুল্ক আদায় ও লেবার হ্যান্ডলিং এবং ফেরি/খেয়াঘাট সীমানাভুক্ত করে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইজারা দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই খাসজমি বিআইডব্লিউটিএর কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এমনকি জেলা পরিষদ বিআইডব্লিউটিএ’র ইজারা দেয়া নদীবন্দর ঘাটের মালিকানা দাবি করায় স্থবির হয়ে যায় নদীবন্দরের কার্যক্রম।
এদিকে পাথর ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন খাঁন জানান, গত ২৫ তারিখ থেকে ট্রলার দুটি আটক রেখে নানা টালবাহানা করছেন কাস্টমস্ কর্মকর্তারা। সম্ভাবনার একটি নতুন দিগন্তকে কাস্টমস্ কর্মকর্তারা গলা টিপে হত্যা করছেন দাবি করে তিনি বলেন, ৭১’র পর আসাম থেকে জলপথে পাথর আমদানি এই প্রথম। এর আগে ১৮ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপ ভুটান থেকে এ পথেই পাথর আমদানি করেছেন। এটাকে সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত বলে অভিহিত করেন ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশের হাইকমিশনারগণ। কিন্তু অজানা কারণে কাস্টমস্ গত ১৪ দিন ধরে পাথর বোঝাই (ডব্লিউ বি ঈগল-১ ও ডব্লিউ বি বদিউজ্জামান-২) ট্রলার দুটিকে আটকে রেখেছেন। আটক থাকার কারণে আমাদের প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
রাজস্ব ও আমদানীর সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও ট্রলার দুটিকে আটকে রাখার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রংপুর কাস্টমস্ এর (সেক্রেটারী ২য়) কর্মকর্তা আকতার হোসাইন জানান, ব্রহ্মপুত্র দিয়ে নৌরুটে আমদানীর বিষয়ে উভয় দেশের চুক্তি হলেও বাস্তবিক পক্ষে আমরা এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। এটি তদারকি করতে চিলমারী পয়েন্টে আমাদের লোকবল এখনও নিয়োগ দেয়া হয়নি। এটি না জেনেই শেরপুরের দু’জন ব্যবসায়ী ভারত থেকে পাথর আমদানি করেছেন। ফলে ট্রলার দুটিকে সাময়িকভাবে ‘চলৎশক্তিহীন’ করে রাখা হয়েছে মাত্র। তারা আবেদন করেছেন। কাগজপত্র ঠিক হলেই ট্রলার দুটিকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হতেই এ রুটের উদ্বোধন করা হল কেন এ প্রশ্নের কোন জবাব তিনি দেননি।
এ বিষয়ে রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি”র কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিদ হাসান নলেজ জানান, সরকারি পর্যায়ে ত্রিদেশীয় চুক্তির মাধ্যমে বে-সরকারি ভাবে পাথর আমদানি-রপ্তানির কাজ করছেন। এটা দারুন একটি ঘটনা। এটা শিল্পায়ণ ও ব্যবসার নতুন একটা দিক উন্মোচন করতে পারে। ফলে সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। তাই যত দ্রুত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে, জনবল নিয়োগ দিয়ে নৌ-বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের দাবি জানান।