দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে এখনও দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত ও চীনের বিভিন্ন কোম্পানি দেশের বিভিন্ন কয়লা খনি নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। এসব চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।’
সোমবার সকাল ১১টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর নিমতলা মোড়ে ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উপজেলা শাখা আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে জাতীয় কমিটি কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও দিনাজপুরমুখী পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ২০০৬ সালে চারদলীয় সরকার ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে ছয় দফা চুক্তি করে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা, আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেসব দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ছয় দফা চুক্তির মূল কথা হলো, এশিয়া এনার্জি এ দেশে কাজ করতে পারবে না। কয়লা খনি এমনভাবে খনন করা যাবে না, যাতে মানুষের সম্পদ নষ্ট হয় বা মানুষের ক্ষতি হয়।
অবিলম্বে এশিয়া এনার্জিকে বহিস্কারের দাবি জানিয়ে আনু মুহাম্মদ প্রশ্ন করেন, কোন সাহসে তারা ফুলবাড়ীবাসীর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করে? তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির দিকেও ভারতীয় কোনো কোনো গোষ্ঠীর নজর রয়েছে। কিন্তু চীন, ভারত, ব্রিটেন, রাশিয়াসহ বাংলাদেশের কোনো কোম্পানিকেও এমন কাজ করতে দেওয়া হবে না, যাতে দেশের ক্ষতি হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী, জাতীয় গণফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আনছার আলী দুলাল, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক হোসেন লাবু প্রমুখ।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকালে ফুলবাড়ীতে এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জাতীয় কমিটি দিবসটিকে ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে। এ ছাড়া স্থানীয় পৌর মেয়র মর্তুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারেও দিবসটিতে পৃথক কর্মসূচি পালিত হয়। যার মধ্যে ছিল বিক্ষোভ মিছিল, স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনা সভা।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি খননের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনজন, আহত হন দুই শতাধিক। তার পর থেকে ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।