নাদিরা খানম তুলি,সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
রাজধানীর বাংলামোটরে অফিস থেকে বের হয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক কৃষ্ণা রায় (৫২)। হঠাৎ করেই বেপরোয়া গতির একটি বাস তাকে ধাক্কা দেয়। রাস্তায় ছিটকে পড়লে সেই বাসের চাকা উঠে গিযে তার বাম পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। দিনেদুপুরে ঢাকার সড়কে এমন বেপরোয়া আচরণের পর ট্রাস্ট পরিবহনের বাসটি পালানোর চেষ্টা করলেও জনতা সেটি আটক করে। তবে এর চালক-হেলপার পালিয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বছরের ৩ এপ্রিল বাংলামোটরের অদূরেই কারওয়ান বাজার ক্রসিংয়ে দুই বাসের পাল্লায় চাপা পড়ে হাত বিচ্ছিন্ন হয় সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই মহাখালী এলাকায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে পা হারিয়েছিলেন গৃহকর্মী রোজিনা আক্তার। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। প্রায় একই সময়ে বাসের চাকায় পা বিচ্ছিন্ন হয় প্রাইভেটকার চালক রাসেলের। তিনি এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছেন। এসব ঘটনায় আদালত জরিমানা ও সর্তক করলেও ফের ঢাকাতে ঘাতক বাসের চাকায় পা গেল নারী কর্মকর্তার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা খন্দকার মাসুম হাসান সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার পর কৃষ্ণা রায়কে উদ্ধার করে প্রথমে হলি ফ্যামেলি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেলে চিকিৎসকের অস্ত্রোপচার করে কৃষ্ণা রায়ের হাঁটু থেকে বাম পা কেটে ফেলেন। বাসের চাকায় তার ওই পা থেঁতলে গিয়েছিল। তার মাথায় ছোট দু’টি সেলাই করতে হয়েছে। এই চিকিৎসক বলেন, কৃষ্ণা রায়ের অবস্থা গুরুতর। তার মাথাতেও আঘাত রয়েছে। সিটি স্ক্যান করে সেই আঘাতের ধরন বোঝার চেষ্টা চলছে। এখনই তার অবস্থার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ইকবাল হোসেন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কৃষ্ণা রায় নামের ওই নারী বাংলামোটরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিগন্যাল ছাড়তেই কারওয়ানবাজারের দিক থেকে আসা ট্রাস্ট পরিবহনের বাসটি বেপরোয়া গতিতে টান দেয়। এতে তাকে ধাক্কা দিয়ে সেটি অনেকটা ফুটপাতের উপর উঠে যায়। তিনি ছিটকে পড়েন। এরপর সেই বাসটির চাকা দিয়ে তার পা পিষে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীরা চিৎকার দিয়ে এবং পথচারীরা ধাওয়া দিয়ে সেটি আটক করে। ইকবাল জানান, কৃষ্ণা রায়কে উদ্ধারের সময়েই তার একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন দেখেছেন। সেটি চামড়ার সঙ্গে ঝুলে ছিল। তার জ্ঞান থাকায় পরিচয় দিতে পেরেছিলেন। তখন তার অফিসে খবর দেওয়া হয়। বিআইডব্লিউটিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মিশা বলেন, কৃষ্ণা রায় অর্থ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক। তিনি দুপুর দুইটার দিকে অফিসের কাজে পুরান ঢাকায় যাওয়ার জন্য বিআইডব্লিটিসির প্রধান কার্যালয় থেকে বের হন। সড়ক পার হয়ে বাংলামোটরের পূর্ব পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময়েই শাহবাগগামী ট্রাস্ট পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি ( ঢাকা মেট্রো ব ১১৯১৪৫) তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পায়ের উপর চাকা তুলে দেয়।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, কৃষ্ণা রায় এক মেয়ে ও এক ছেলের মা। তার স্বামীর নাম রাধে সেন। তারা পুরান ঢাকার টিকাটুলী এলাকায় থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের এডিসি মেহেদী হাসান জানান, দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাস্ট পরিবহনের বাসটির চালক ও হেলপার ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে চালক-হেলপারকে শনাক্ত করা হবে।