বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন
বরিশাল প্রতিনিধি:
বরিশালে এখনও ডেঙ্গু আতঙ্ক কাটেনি। নগরীতেই পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। এ মশার উৎসের সন্ধানে স্বাস্থ্য বিভাগের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধি দল গত ২১ আগস্ট থেকে বরিশালে অবস্থান করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
এডিস মশার উৎস নির্মূল করতে না পারলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগামীতে আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই কমে আসছে।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের (শেবাচিম) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেখানে প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয় গত ১৬ জুলাই। এরপর থেকে ক্রমেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। গত শনিবার পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২ হাজার ৩৮১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৬ জন। পুরো বিভাগে (৬ জেলা) মৃত্যুর সংখ্যা ১২। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে জানিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে ঢাকার বাইরে বরিশাল জেলা দ্বিতীয়। শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে প্রতিদিন দেড় শতাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতেন। এখন এ সংখ্যা একশ’র নিচে নেমে এসেছে।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন প্রথম দিকে দাবি করে আসছিলেন, রোগীরা ঢাকা থেকে আসার পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তবে দিনবদলের সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলাতে থাকে। কোনোদিন ঢাকায় যাননি এমন ব্যক্তিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শেবাচিমে ভর্তি হন।
জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) যৌথ অভিযানে নগরীর মধ্যে একাধিক স্থানে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া যায়। বিসিসির স্যানিটারি পরিদর্শক সৈয়দ এনামুল হক জানান, গত শুক্রবার নগরীর অপফোর্ড মিশন সড়কে নির্মাণাধীন একটি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার নগরীর অভিজাত এলাকা জর্ডান রোডে ৩টি নির্মাণাধীন ভবনে পাওয়া যায় এডিস মশার লার্ভা। এসব ভবন মালিকদের অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইইডিসিআরের ১৯ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ২১ আগস্ট থেকে বরিশালে কাজ শুরু করে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য রোগতত্ত্ব বিভাগের সদস্যরা ৬টি দলে এবং কীটতত্ত্ব বিভাগের সদস্যরা ৫টি দলে ভাগ হয়ে কাজ করছে। রোগতত্ত্ব দলের সদস্যরা নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে খানা জরিপ, জনসংখ্যার ঘনত্ব, ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী আছেন কি-না তা যাচাই এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের রোগের ইতিহাস ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন। অপরদিকে কীটতত্ত্ব দলের সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, হাসপাতালগুলো থেকে এডিস মশার লার্ভার নমুনা সংগ্রহ করছেন।
আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ দলটির প্রধান গবেষক ও রোগতত্ত্ববিদ ওমর কাইউম বলেন, বরিশালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। এর কারণ চিহ্নিত করতে মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং সংগৃহীত লার্ভা থেকে মশার প্রজাতি শনাক্ত করা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্নেষণ করে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট পেতে সময় লাগবে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল শাখার সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, সাময়িকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেছে। তবে স্থানীয়ভাবে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এতে বোঝা যায়, স্থানীয়ভাবে এ মশা জন্ম নিচ্ছে। একে নির্মূল করা না গেলে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।
তবে বিসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, নগরীতে যে লার্ভা এডিস মশার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো আদৌ এডিশ মশার কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি জানান, নগরীতে নিয়মিতভাবে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। নিয়মিত এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।