প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে ছাত্রলীগ মিথ্যা গল্প ছুড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি। উপাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ মিথ্যা গল্প ছুড়েছে। আমি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। এ বিষয়ে আমি তদন্ত করতে বলব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে, মাননীয় আচার্যকে। আমি যাব তাদের কাছে। এতে আমার কোন সমস্যা নেই। জাবির উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে ২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয় বলে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ করা হয় গণমধ্যমে। ওই প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, অর্থ লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট একটি গল্প। টাকা পয়সা নিয়ে তাদের সাথে আমার কোন কথা হয়নি। তারা তাদের মত করে কাজ করে। তারা কার কাছে কমিশন পায় বা না পায় তা আমি জানিনা। উপাচার্য বলেন, এ বিষয়ে তারা (ছাত্রলীগের দুই নেতা) আমাকে ইঙ্গিত দিলে আমি বলি, তোমরা টাকা পয়সা নিয়ে কোনও আলাপ আমার সাথে করবে না। তোমরা যা চাও তা তোমাদের মত কর। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও জানেন। অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, তাদের (ছাত্রলীগ) মূল উদ্দেশ্য ছিল যে তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু শতাংশ নিবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে খোলাচিঠি লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেন মিথ্যা কথা বলবেন- এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, আমি দুর্ভাগ্যক্রমে শেষ তীর ছিলাম। এটা হয়তো আমার দিক থেকেই গেল। তার পটভূমি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। কি-না করেছে সে, শুধু যে এ গল্প তা কিন্তু না। ঢাবি, ইবি, জবির এই পটভূমিতে যেন তার প্রিয় ছাত্রলীগের পচন না ধরে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তদন্ত শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ হয়তো আমারটা দিয়ে শেষ হয়ে গেল। তারা এ পটভূমি করেছে এ থেকে বাঁচতে। তাই ক্যাম্পাসের আন্দোলনের সাথে এ বিষয়টিও জড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু মানুষ আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে চাচ্ছে। তাই আমি চাই দুর্নীতি যেই করুক তার তদন্ত হোক। যে বা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট করেছে তার তদন্ত হোক। হয়তো আমাকে বের করতে গিয়ে অন্যকিছু বেরিয়ে আসবে।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) জিএস (সাধারণ সম্পাদক) গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা সমালোচনা চলে আসছিল।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় এই দুই নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ছাত্রলীগের প্যাডে রাব্বানীর স্বাক্ষরে গত বুধবার পাঠানো ওই চিঠিতে দুই নেতার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়র নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার কাছে ভিন্নভাবে উত্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।