এখন সর্দিকাশি, জ্বর, করোনা ভাইরাস এসব নিয়ে জনমনে বেশ উদ্বেগ–শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকেরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। বিশেষ করে, ভিটামিন ই ও ভিটামিন সি–জাতীয় শাকসবজি খেতে হবে বেশি। তাই প্রতিদিনের খাবারে টমেটো, লেবু, জাম্বুরা, মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে, কালো জিরা রাখুন। এসবে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রসঙ্গত, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালি হলে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস জনিত রোগের প্রতিরোধ করা সহজ হয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম, মেডিটেশনও খুব সাহায্য করে। জেনে নেয়া যাক, এমন কিছু খাবারের তালিকা-
লেবুপানি: লেবুপানি সর্দিকাশিতে উপকারী, করোনার ক্ষেত্রেও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুপানি তৃষ্ণা নিবারণের পাশাপাশি শরীরে এমন বেশ কিছু উপকার সাধন করবে, যা ওষুধিগুণের মতো।
লেবুর রসে পাঁচ শতাংশ সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। লেবুতে ভিটামিন সি বিপুল পরিমাণে রয়েছে। মাঝারি আকারের একটি লেবুতে এর পরিমাণ প্রায় ৪০ মিলিগ্রাম, যা একজন মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন সি–এর চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
লেবুপানি প্রথমত শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইটের সমতা রক্ষা করে। দ্বিতীয়ত, গরমের সময় প্রচুর ঘাম হওয়ায় শরীরে অনেক রকম ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জন্মে। লেবুপানি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, এতে শরীর স্বাভাবিক নিয়মেই এসব ধ্বংস করে ফেলে। ফলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও কমে। এ কারণেই লেবুপানি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করবে। লেবুপানি যকৃতের সংক্রমণও প্রতিরোধ করে, পরিপাকের ক্ষমতা বাড়ায়।
লেবুপানি রক্ত পরিশোধনেও ভালো কাজ করে। রক্তের লোহিতকণিকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন। লেবুপানি হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা তিন গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। আর শ্বেতকণিকার পরিমাণও বাড়ায়। তবে যাদের অ্যাসিডিটি বা আলসার আছে, কিংবা কিডনিতে সমস্যা, তারা লেবুপানি বা শরবত পান করতে যাবেন না।
গাজরের মতো মিষ্টি আলুতেও থাকে বিটাক্যারোটিন। মানুষের শরীরে ঢুকে এটি হয়ে যায় ভিটামিন এ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
বাসায় বানানো মুরগির স্যুপ মানুষের শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে থাকা রাসায়নিক পদার্থ কারনোসিন ভাইরাসজনিত জ্বরের সংক্রমণ থেকে শরীরকে বাঁচাতে ভূমিকা রাখে।
কাঁচা রসুন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকজনিত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেরও ভালো উৎস। তাই প্রতিদিন কয়েক কোয়া রসুন খেয়ে নিন।
অপরদিকে, তরমুজে থাকে গ্লুটাথায়োন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
ওমেগা–৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) বাড়াতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন মাছ খান।
জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ ও দই রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দুধ হজম না হলে দুধের তৈরি খাবার খান।
ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধে খুব সাহায্য করে। গাজর, টমেটো, কুমড়া বেশি করে খান।
মধু ও দারুচিনি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের শরীর দুর্বল তারা মধু খেলে উপকার পাবেন।
আমলকীর সঙ্গে অল্প আদা ও খেজুর বেটে চাটনি তৈরি করে খাওয়া যায়। ভিটামিন সিতে ভরপুর আমলকীর এই চাটনি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। সারা দিনে প্রচুর পানি পান করুন। এ ছাড়া ভেষজ চা–ও খেতে পারেন। টক দইতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য খনিজ। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুণ কার্যকর। টক দইয়ে ভালো কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে, যা দেহের জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।