যৌতুকের টাকা না পেয়ে সাদিয়া (২০) নামে এক গৃহবধূকে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে এক পাষন্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় মাছ ভাজার স্টিলের খুন্তি গরম করে মুখ, হাত, পা ও কোমরে ছ্যাকা দেয়। এমনকি কেঁচি দিয়ে তার মাথার চুলও কেটে দিয়েছে বর্বর স্বামী।
গত ২৯ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নে ঘটে এমন ঘটনা। ঘটনার শিকার সাদিয়া আক্তার উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের ধরমন্ডল গ্রামের আলমাছ মিয়ার মেয়ে। তার স্বামী রতন মিয়া একই ইউনিয়নের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর পূর্বে রতন মিয়ার সাথে সাদিয়ার পরিচয় হয় মোবাইলে। তারপর প্রেম। কিছুদিন পর পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে রতন মিয়াকে। বিয়ের পর মোটামুটি বেশ ভালই চলছিল তাদের সংসার। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে একটি ছেলে সন্তানও আসে। তবে বিয়ের পর সম্পর্কটি যেন ক্রমশই তিক্ত হতে থাকে। মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েন রতন। এরপর থেকেই তার সাথে মাদক ব্যবসা করতে চাপ সৃস্টি করে রতন। কিন্তু সাদিয়া মাদক ব্যবসা করবেনা বলে জানিয়ে দেয় রতনকে। প্রয়োজনে রতনের সংসার ছেড়ে চলে আসারও হুমকী দেয় সাদিয়া। পরে রতন কৌশল পরিবর্তন করে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে সাদিয়াকে। স্বামীর অনৈতিক চাহিদা মেটাতে না পারায় তার উপর নেমে আসে বর্বর নির্যাতন।
সবশেষে গত ২৯ মার্চ রতনের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় ও যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় স্টিলের খুন্তি গরম করে গাল, হাত, পা ও কোমরে ছ্যাকা দেয় রতন। এমনকি কেঁচি দিয়ে তার মাথার চুলও কেটে দিয়েছে বর্বর এ স্বামী। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মজলিস মিয়ার সহযোগিতায় সাদিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাদিয়া জানান, বিয়ের বছর তিনেক ভালই কেটে ছিল তাদের সংসার। হঠাৎ করেই তার স্বামী পরিবারের অন্য নারীদের মতো চেইন চুরি, ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করতে চাপ সৃষ্টি করে। এ সকল অন্যায় কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় তার স্বামী যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তার উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন।
এ বিষয়ে ধরমন্ডল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. বাহার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নির্যাতনের বিষয়টি শুনেছি। নির্যাতিতার পরিবার সহায়তা চাইলে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ তার পাশে থাকবে।
ভুক্তভোগী সাদিয়ার মা গুলজার বানু জানান, আমার মাইয়াডা নিজে নিজে বিয়া করছিল। অহন মাইয়াডারে টাকার লাইগ্যা শরীরে গরম চেহা (ছ্যাকা) দিতাছে। আমরা গরীব মানুষ। কার কাছে যামু, কই বিচার চামু। করোনার কারণে আদালতও বন্ধ।
এ বিষয়ে নাসিরনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান জানান, থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।