কোভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মপন্থা নির্ধারণ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির নিমিত্তে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর নির্বাহী কমিটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বিশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আব্দুল মোমেন ওআইসি সচিবালয় এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমূহকে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি তৈরি করার কাজে লাগাতে আহ্বান জানান।
আজ বুধবার (২২ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
এ মিটিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। স্বাগত বক্তব্যে ড. মোমেন এই মহামারী মোকাবেলায় ইসলামের চিরায়ত আদর্শ ও মুসলিম ভ্রাতিত্ববোধ হতে উৎসারিত সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যহত রাখার কথা বলেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং সরঞ্জামাদি নিয়ে যে সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করে তাদেরকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে একত্রিত করে এই মুহূর্তে অতি প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদির তৈরি করার কাজে লাগাতে ওআইসি সচিবালয় এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমূহকে বাংলাদেশ আহবান জানায়।
অভিবাসী শ্রমিক, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ওআইসি ভুক্ত দেশে যে সকল মুসলিম শ্রমিক কাজ করে্, তাদের দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে মন্ত্রী তাদের চাকুরি বজায় থাকার নিশ্চয়তা প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে অনুরোধ করেন, যাতে করে বেকারত্বের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কমানো ও সামাজিক সমতা বজায় রাখা যায়। সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্বেচ্ছায় অনুদান প্রদানের মাধ্যমে একটি কোভিট-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকোভারি ফান্ড গঠনে এই সভায় বাংলাদেশ একটি প্রস্তাবনা রাখে।
এই মহামারির প্রকট না কমা পর্যন্ত মুসলিম অভিবাসিদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং তাদের চাকুরি রক্ষার ব্যবস্থা করার জন্যে মানবাধিকার সংগঠন সমূহকে নিয়ে কাজ করার জন্য ওআইসি সচিবালয়কে বাংলাদেশ পরামর্শ দেয়। দরকারি সম্পদ বণ্টনের মাধ্যমে এই মহামারির সময়ে বিশ্বব্যাপী যে সকল মুসলিম শরণার্থী রয়েছে তাদের দেখভালের বিষয়টি নিশ্চয়তার জন্য বাংলাদেশ সদস্য দেশ সমূহের সমন্বিত প্রয়াসের উপর জোরদার আরোপ করে।
বাংলাদেশ, তুরস্ক, সৌদি আরব, গাম্বিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং নাইজার- এই ছয়টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে ওআইসি’র বর্তমান নির্বাহী কমিটি গঠিত। এই ছয়টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপযুক্ত প্রতিনিধি ও ওআইসি মহাসচিবের অংশগ্রহণে নির্বাহী কমিটির এই বিশেষ বৈঠকটি সৌদি আরবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
বিরোধপূর্ণ এলাকায় বিবাদমান প্রতিপক্ষসমূহকে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রাদানে ব্যবস্থা করার জন্য ওআইসি নির্বাহী কমিটি আহ্বান জানায়। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাহত দেশসমূহে খাদ্য সহায়তা প্রদানে মানবাধিকার কর্মীদেরকে অনুরোধ জানানো হয়। কোভিড-১৯ ও এর পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলার জন্য নির্বাহী কমিটি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক সংস্থাকে স্বল্পোন্নত দেশ সমূহের ঋণ মওকুফ সহ সহজ শর্তে ঋণ পাবার বন্দোবস্ত করার জন্য ভেবে দেখতে অনুরোধ করেন।
ওআইসির ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক গ্রুপ কোভিড-১৯ এর মোকাবেলায় সম্প্রতি ‘র্যাপিড রেসপন্স ইনিশিয়েটিভ’ এর আওতায় ২.৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা ঘোষণা দেয়। এছাড়া ওআইসি আরেকটি সংস্থা ইসলামী সলিডারি ফান্ড, সদস্য রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত সদস্য দেশসমূহকে তাদের স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বাড়াতে একটি আলাদা হিসাব খুলেছে। এই উদ্দ্যেশে ওআইসি সচিবালয়ের আওতায় একটি ‘কোঅর্ডিনেশন মেকানিজম’ তৈরির জন্য সভায় আলোচনা হয়।