মাহফুজার রহমান মাহফুজ,ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
দারিদ্রতা আর শারীরিক অসুস্থ্যতার যাতা কলে পৃষ্ঠ্য হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন রফিকুল ইসলাম(৫৫)।ডায়াবেটিস সহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তার জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা।তারপরেও স্ত্রী-সন্তানের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে অসুস্থ্যতাকে অগ্রাহ্য করে সে দিন মজুরের কাজ করতো।তার উপার্জিত টাকায় চলতো সংসারের যাবতীয় খরচ।আদরের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে রোগের যাতনাকে ভুলে কাজ করে গেছেন প্রতিনিয়তই। তবে জীবন সংগ্রামে সবাই টিকে থাকতে পারেনা।কোন এক সময় থামতে হয় প্রত্যেককেই। হয়তো সে নিয়মেই থামতে হয়েছে রফিকুলকেও।বর্তমানে জটিল সব অসুখের কারণে সে হারিয়েছে কর্মক্ষমতা। এক সময় যার উপার্জনে সংসার চলতো সেই রফিকুলই এখন সংসারের বোঝা।পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন অবস্থার কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী-সন্তান।একদিকে তার চিকিৎসার খরচ অপরদিকে দিনে দিনে মেরামতের অভাবে ভেঙ্গে পরছে তাদের একমাত্র বসত ঘরটি।
রফিকুল ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাত নং ওয়ার্ডের চন্দ্রখানা গ্রামের(শাহবাজার) মৃত বজলে রহমান মাস্টারের ছেলে।সে স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তানের জনক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,জরাজীর্ণ একটি টিনের ঘরে রফিকুলের বসবাস।সেখানেই দেখা মিললো রুগ্ন রফিকুলের। ছোট্টঘরের এককোণে পাতানো চৌকিতে শুয়ে রোগের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে সে।দীর্ঘদিন হতে মেরামত না করায় ঘরটির বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেছে। যে কোন সময় তা ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বর্তমানে ঘরটির যে জরাজীর্ণ অবস্হা তাতে এটি মেরামতেরও সুযোগ নেই।
রফিকুলের স্ত্রী বলেন,আমার স্বামীর অসুখের পর থেকে আমি অন্যের বাড়ীতে কাজ করে যা আয় করি তা দিয়েই কোনমতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে।কোন উপায় না থাকায় অসুস্থ্য স্বামী আর বাচ্চাদের নিয়ে এই ভাঙ্গাঘরে বাস করছি।বর্তমানে একটু বৃষ্টি হলেই সাড়া ঘর পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যায়।একটু বাতাস হলেই ঘরের নিচে চাপা পরার ভয়ে অসুস্থ্য স্বামী আর বাচ্চাদের নিয়ে গাছ তলায় আশ্রয় নিতে হয়।কারো সাহায্য সহযোগীতা ছাড়া আমার পক্ষে ঘর ভালো করা সম্ভব নয়।
শুনেছি যাদের ঘর নাই সরকার তাদের ঘর তুলে দিচ্ছে। আমাদেরকেও যদি সরকার ঘর দিত তাহলে আমি অসুস্থ্য স্বামী আর মাসুম বাচ্চাদের নিয় মাথা গোঁজার ঠাই পেতাম।
এলাকাবাসীরা জানান,রফিকুল পৈতৃক সূত্রে এই বসতভিটা আর কিছু আবাদি জমি পেয়েছিল। অসুখের কারণে তার সমস্ত আবাদি জমি বিক্রি করা হয়েছে।বর্তমানে তার বাড়ীভিটা ছাড়া আর কোন কিছুই নেই।আর তার শরীরের যে অবস্হা তার পক্ষে নতুন করে ঘর তোলা কোনভাবেই সম্ভব না।এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি ঘর তুলে দেয়ার বরাদ্দ দিয়ে থাকে তাহলে রফিকুল তা পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন তারা।
রফিকুলের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্তের সাথে কথা হলে তিনি বলেল-রফিকুলের এমন মানবেতর জীবন-যাপন আসলেই দুঃখজনক।ঘর প্রত্যাশীদের তালিকায় তার যাবতীয় তথ্য পাঠানো হবে। বরাদ্দ আসলেই সরকারি ভাবে তার ঘর তুলে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।