মোঃ মজিবর রহমান নাগেশ্বরী ঃ
জমি-জমা সংক্রান্ত জেরে কৃষকের জমির দলিল চুরি করতে রাতের আঁধারে ঘরে সিঁদ কাটার
অভিযোগ উঠেছে। কৃষক আব্দুর রহমানের জমির দলিল, নগদ টাকা পয়সা, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার গভীর রাতে কুডিগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ সাপখাওয়া গ্রামে।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুর রহমান তার জমির দলিলসহ ঘরে রক্ষিত নগদ টাকা হারিয়ে এখন চরম
হতাশায় রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আমি আমার নিজ জমির কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলাম। পথিমধ্যে জমি-জমা সংক্রান্ত মামলার বিবাদী পক্ষের লোক মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম আমার পথরোধ করে। সে আমাকে মামলা তোলার হুমকী দেয় এবং বিভিন্ন গালিগালাজ করে। বাড়ি ঘরের ক্ষতি করে ধ্বংস করে দিবে। আমি তার এসব কথা নীরবে সহ্য করে বাড়ি চলে আসি। ওইদিন রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পরদিন সকালে দেখতে পাই, আমার বড় ছেলের ঘরে সিঁদ কাটা। বড় ছেলে চাকুরির সুবাধে বাহিরে থাকায় ও ছেলের বউ বাবার বাড়িতে থাকায় ওই ঘরে কেউ ছিলনা। ঘরটি তালাবদ্ধ ছিল। পরে ঘরের দরজার তালা খুলে দেখতে পাই সবকিছু এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। শোকেচের ড্রয়ার খোলা, বিছানা উল্টানো, দলিল রাখা কাগজের ফাইল মাটিতে। আমার জমির দলিলপত্র, শোকেচের ড্রয়ারে থাকা নগদ টাকা, আমার একটি মোবাইলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব চুরি করা হয়েছে। এসব হারিয়ে আমি বিপাকে ও হতাশায় পড়িছি। আমাকে সকালে হুমকী দেয়ার পরেই রাতে সিঁদ কেটে চুরির ঘটনাটি হয়েছে। এতে আমার ধারনা, আমার জমি সংক্রান্ত মামলার ওই হুমকী
প্রদানকারী বিবাদী পক্ষই আমার এই সর্বনাশ করেছে। আমি এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিতে চাই। আমার জীবনের নিরাপত্তাসহ চুরির মালামাল ফেরত ও চুরির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবির জন্য স্থানীয় পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ উপজেলা প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি। জানা গেছে দক্ষিণ সাপখাওয়া গ্রামের ধনের উদ্দিন এর পুত্র কৃষক আব্দুর রহমান ১৯৮৫ সালে ৮১৩২ নং দলিল মূলে ধনদ্দির নিকট থেকে ১৬ শতক ,১৯৮০ সালে ৫৮৭৪ নং দলিল মূলে পনির উদ্দিনের নিকট থেকে ৮ শতক জমি এবং ১৯৮০ সালে ৮৩৭৪ নং দলিল মূলে আব্দুস ছাত্তার মোক্তার এর নিকট থেকে ১১ শতকসহ মোট ৩৫ শতক জমি ত্রুয় সূত্রে দীর্ঘদিন থেকে ভোগ দখল করে আসছেন। চতুর ও ধৃতবাজ আব্দুস সাত্তার মোক্তার বিত্রুয়কৃত জমি চালাকী করে বিত্রিুর আগে গোপনে স্ত্রী ও পুত্র দ্বয়ের নামে ৩৩ শতক জমি কবলা করে দেন। যাহার কোন কার্যকারিতা বা আইনগত বৈধতা নেই। শুধু তাই নয় তিনি ওই ভুয়া দলিল দিয়ে কৌশলে নিজ নামে খারিজ এবং আর এস ডিপি রেকর্ড করেন । জমির প্রকৃত মালিক আ.
রহমান জানতে পেরে ভুয়া খারিজ এবং আর এস ডিপি রেকর্ডের উপর সহকারী কমিশনার (ভুমি ) নাগেশ্বরী অফিসে গত ১০/৪/২০১৮ ইং তারিখে ১৮/১৮ নং মোকদ্দমা দায়ের করেন। এতে অব্দুস সাত্তার গং ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল লাঠি, বল্লম, দা, কাচি, কুড়াল ও মারাত্মক অস্ত্রসহ বাদীর ৩৫ শতক জমিতে লাগানো পাটও ধুমসা কাটিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করেন। কিন্ত বাদী পক্ষ বাধা প্রদান করিলে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। আসামীরা যাতে অবৈধভাবে জমি দখল করিতে না পারে এই মর্মে বিবাদীর বিরুদ্ধে স্বত সাব্যস্ত চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ডিক্রীর জন্য আদালতে মোকদ্দমা দাখিল করেন। বিজ্ঞ আদালত গত ১১/২/২০২০ ইং তারিখে উক্ত জমিতে উভয় পক্ষের জন্য নিষেজ্ঞা জারী করেন। বাদী পক্ষ আদালতের রায় মানলেও আসামী আব্দুস সাত্তার গং ২৩ ডিসেম্বর/২০১৯ইং তারিখে উক্ত জমিতে অবৈর্ধ ভারে ঘর উত্তোলন করার চেষ্ট করেন। বাদী আব্দুর রহমান
এতে বাধা প্রদান করে কিন্ত আসামীরা তাকে হত্যার হুমকি দিলে সে ভয়ে নাগেশ্বরী থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এর ফলে এস এই ফারুকী ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘর তোলার বিভিন্ন মালামাল জব্দ করেন এবং ঊভয় পক্ষকে জমির কাগজপত্রসহ গত ১/১/২০২০ইং নাগেশ্বরী থানায় উপস্থিত থাকার জন্য বলেন। এদিকে গোপনে বাদীকে না জানিয়ে আসামীদের জব্দকৃত টিন ও কাঠ বাঁশ ফেরত দেন। মালামাল ফেরত পেয়ে আসামীরা থানায় উপস্থিত না হয়ে আবারো গত ২৩/১/২০২০ইং তারিখে উক্ত জমিতে মাটি কাটাসহ ঘর উত্তোলন করার চেষ্টা করে। বাদী আ: রহমান গত ২৪/১/২০২০ইং তারিখে নাগেশ্বরী থানায় আরো একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে এসআই জুয়েল আসামী মিন্টুকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করে। পরে ওই জমিতে না যাওয়ার শর্তে অঙ্গীকার নামায় ছেড়ে দেন। বার বার পার পাওয়ায় আসামীরা আবারো ১৬/২/২০২০ ইং তারিখে ঘর তোলার চেষ্টা করলে নাগেশ্বরী থানার এস আই আলিফনুর ঘটনাস্থলে গিয়ে আদালতের নিষেজ্ঞার কথা জানিয়ে দেন এবং ওই বিবাদমান
জমিতে কোন প্রকার ঘর বা দখল করা যাবেনা বলে সতর্ক করেন। আসামীরা পুলিশের এই নিষেধেজ্ঞা অমান্য করে গত ১৩/৫/২০২০ইং তারিখে গভীর রাতে নুতন করে একটি খড়ের ঘর তৈরী করেন। ফলে বাদী পক্ষ বর্তমানের উক্ত আসামীদের ভয়ে জীবন যাপন করছেন। এরইমধ্যে ১৬ জুন মঙ্গলবার বাদী কৃষক আব্দুর রহমানকে হুমকী প্রদান ও পরে তার বাড়িতে সিঁদ কেটে চুরির ঘটনাটি ঘটানো হলো। কৃষক আব্দুর রহমানের জমি সংক্রান্ত ঘটনার মামলায় সরেজমিনে তদন্তে আসা নাগেশ^রী থানার এসআই ফারুকী বলেন, কৃষক আব্দুর রহমানের বাড়ি চুরির বিষয়ে এখনও কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি এ সময় ভুক্তভোগী কৃষককে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।