শুক্রবার , অক্টোবর ১১ ২০২৪
Home / তথ্য-প্রযুক্তি / ‘ক্যাবল অপারেটরদের বিভক্তি অপ্রত্যাশিত-অনাকাঙ্খিত’

‘ক্যাবল অপারেটরদের বিভক্তি অপ্রত্যাশিত-অনাকাঙ্খিত’

বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের সভাপতি এরফানুল হক নাহিদ ও মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন মুন্না এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন- ভারতীয় চ্যানেল নিয়ে দেশীয় ক্যাবল অপারেটরদের বিভক্তি অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্খিত।

ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (পরিচালনা ও লাইসেন্সিং) এর বিধিমালা-২০০৬ এর কথা তুলে ধরে সভাপতি এরফানুল হক নাহিদ বলেন, বিধিমালার ৫.৫ ধারা (১২)-তে বলা হয়েছে- কোনও ডিস্ট্রিবিউটর বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকার অনুমোদিত চ্যানেল ব্যতীত নিজস্ব কোনও অনুষ্ঠান যেমন- বিজ্ঞাপন, ভিডিও, ভিসিডি প্রভৃতির মাধ্যমে বা অন্য কোনও উপায়ে কোনও চ্যানেল বাংলাদেশে বিপণন, সঞ্চালন ও সম্প্রচার করতে পারবে না। কিন্তু এর তোয়াক্কা করছেন না দেশীয় অপারেটররা। এতে দেশীয় চ্যানেলগুলোর অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে মান ও রুচিহীন অনুষ্ঠান এবং কিছু নিন্ম মানের বিজ্ঞাপন। যেসব অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন আমাদের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব এবং সামাজিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যা যাচাই করা হচ্ছে না। ফলে একধরণের নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগ নিচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠি। ফলে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি সভ্যতা সংস্কৃতির জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়েছে!

বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন মুন্না তার বিবৃতিতে বলেন, আমাদের আন্দোলনের ফলে সরকারের পক্ষ থেকে দেশীয় চ্যানেলগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাইম ব্যান্ডে দেয়া বাধ্যতামূলক করা হলেও অনেক ক্যাবল অপারেটর তা মানছেন না। অপারেটররা বিদেশি অনেক অনুমোদনহীন চ্যানেল প্রতিযোগিতা করে চালাচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনাময় দেশীয় চ্যানেলগুলো দর্শকদের কাছাকাছিই আসতে পারছে না। এমনকি বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোর নামই জানেন না অনেক দর্শক। আমাদের চ্যানেলগুলো তাদের পরিচিতি হারাচ্ছে। বিদেশি অনেক চ্যানেল বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে কোনও মিল নেই। বরং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ছিটেফোঁটাও নেই তাদের অনুষ্ঠানমালায়। এতে দর্শকরা আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ধারা থেকে অপ-সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছেন।

মুন্না মনে করেন, এই দায়ভার থেকে মুক্তি জরুরি। সেজন্য সরকার ও ক্যাবল অপারেটরদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

মুন্না তাঁর বিবৃতিতে আরও বলেন- ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে, ভারতে অন্য দেশের চ্যানেল ডাউনলিংক করতে হলে প্রথমে ডাউনলিংকের জন্য ৫ কোটি রুপি, সঙ্গে ডাউনলিংকের অনুমতি মঞ্জুরের সময় ১০ লাখ রুপি এবং ডাউনলিংকের জন্য বার্ষিক ফি হিসেবে ১৫ লাখ রুপি প্রতি চ্যানেলকে দিতে হবে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল মাত্র তিন লাখ টাকার টোকেন মানি দিয়ে চালু করা যায়। এছাড়াও বেশিরভাগ ভারতীয় চ্যানেল ‘ফ্রি টু এয়ার’ (বিনামূল্যের) হওয়ায় সব চ্যানেল সম্প্রচার করা অত্যন্ত সুবিধাজনক। বাংলাদেশে ৫০টিরও বেশি ভারতীয় চ্যানেল নির্বিঘ্নে সম্প্রচার হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে দিচ্ছে। ক্যাবল অপারেটরদের দ্বন্দ্বের কারণে দর্শকদের জিম্মি করা যাবে না। তবে আমাদের সমাজ সৃংস্কৃতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলে এবং অনুমোদনহীন চ্যানেল এখনই বন্ধের দাবী জানাই।

বিবৃতিতে মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন মুন্না আরও বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোর অনুষ্ঠানের মান, ধরন, কম্পোজিশন আন্তর্জাতিক মানের। ভারতে যদি বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো তিন লাখ রুপিতে ডাউনলিংক করা যেতো, তাহলে বিজ্ঞাপনদাতাদের ভারতীয় চ্যানেলে অধিকমূল্যে বিজ্ঞাপন দিতে হতো না। বাংলাদেশি চ্যানেলেই তারা আরও বেশি করে বিজ্ঞাপন দিতে পারতো। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়ার পাশাপাশি দেশীয় চ্যানেলগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হতো। দেশীয় মিডিয়া শিল্প আরও বিকশিত হতো।

মুন্না বলেন, সারাদেশের সকল টিভি মালিক, দর্শক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, মন্ত্রী, এমপিরা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আওয়াজ তুলে এসেছেন। কিন্তু ক্যাবল অপারেটররা বিষয়টি মাথাতেই আনছেন না। সরকারও চান আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন হোক।

মুন্না মনে করেন, সম্ভাবনায় দেশীয় মিডিয়া শিল্পকে দেশ এবং বিদেশে উচ্চকিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

মুন্না বলেন, পে চ্যানেলের মাধ্যমে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের কোটি কোটি টিভি দর্শকদের ভালো-মন্দ জানানোর জন্য হেলপলাইন চালুর কথা আমরা বলে আসছি, কিন্তু সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই সেদিকে। দেশ-বিদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন এবং অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন সেন্সর করার জন্য টেলিভিশন সেন্সর বোর্ড গঠন করা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে মুন্না বলেন, কোনও চ্যানেল ১০ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা চাই গ্রাহকদের থেকে একটি নির্দিষ্ট ফি নেয়া হোক। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা শহর, পৌর শহর, ইউনিয়নের জন্য আলাদা আলাদা ফি র্নিধারণ করে তা টিভি চ্যানেলগুলোর স্ক্রলে দেয়া হোক। ক্যাবল অপারেটররা সংযোগের সময় জামানত ও তার ক্রয়ের নামে এককালীন অর্থ নেয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের যেভাবে শোষণ করছেন তা বন্ধ করতে হবে। এজন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

শাহাদাৎ হোসেন মুন্না আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরাম ২০০৫ সালের ৭ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশীয় চ্যানেলগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাইম ব্যান্ডে প্রচারসহ এসব দাবি নিয়ে কথা বলে আসছি। আমরা বিভিন্ন সভা, সমাবেশ, সিম্পোজিয়াম, প্রেস ব্রিফিং, টেবিল টক, টক-শোতে এসব দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এই যৌক্তিক এবং সময়োচিত দাবি বাস্তবায়নে সরকারি তরফে তেমন সাড়া না পাওয়ায় কোটি কোটি দর্শক তাদের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

About admin

Check Also

চলতি মাসে কিছু আইপি টিভির অনুমোদন দেয়া হতে পারে: তথ্যমন্ত্রী

এখন পর্যন্ত কোনো আইপি টিভির অনুমোদন দেয়নি সরকার। চলতি মাসে কিছু আইপি টিভির অনুমোদন দেয়া …

সাইবার যুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধীদের পরাজিত করার আহ্বান পলকের

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, সামনে আরেকটি যুদ্ধ অপেক্ষমান। আর সেটি …

মোবাইলে এক চার্জেই চলবে ৩ মাস!

মানুষের অতি প্রয়োজনীয় একটি জিনিস মোবাইল। এই প্রয়োজনীয় বস্তুটিতে সচল রাখতে প্রতিদিনই চার্জ দিতে হয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *