মঙ্গলবার , জুলাই ২৩ ২০২৪
Home / জাতীয় / রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ এখনই বলা সম্ভব নয়: জানালেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক **

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ এখনই বলা সম্ভব নয়: জানালেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক **

আলমগীর হোসাইনঃ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ নিয়ে এখনই কিছু বলতে চায় না বাংলাদেশ। ‘প্রক্রিয়া চলমান, যে কোনো সময় শুরু হতে পারে প্রত্যাবাসন’-এর বাইরে আর কোনো কথা নেই বলে জানালেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। তিনি বলেছেন, কোন তারিখে প্রত্যাবাসন শুরু হবে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। রোববার রাজধানীতে ‘রোহিঙ্গা সংকট’ নিয়ে সেমিনারে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র সচিব। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে ‘গ্রিন অ্যান্ড রেড রিসার্চ’ আয়োজিত এ সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ। আয়োজক সংস্থার পরিচালক শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় সেমিনারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন পররাষ্ট্র সচিব। শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ সব সময়ই বলে আসছে রোহিঙ্গারা মর্যাদার সঙ্গে তাদের দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাবে। সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিতভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ২২ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আলোচনা চলমান। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতিও রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে উৎসাহিত করার কার্যক্রম চলছে এবং আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে কোনো অগ্রগতি হতেও পারে। তিনি আরও বলেন, পর্দার অন্তরালে অনেক আলোচনা হচ্ছে, নানামুখী প্রচেষ্টা চলছে। সব চেষ্টা সফল হবে এমনটাও নয়। তবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে চায় রোহিঙ্গারা দ্রুততম সময়ে নিজেদের দেশে সম্মানের সঙ্গে ফিরে যাক। এটা একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদেরও প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ নিজের দেশে ফিরে না গেলে রোহিঙ্গারা জমির অধিকারসহ অন্য সব অধিকার হারাবে। প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কোনো কোনো জায়গা থেকে রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার একটি সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ সমস্যা আদৌ বাংলাদেশের নয়, এটি মিয়ানমারের ও তাদের লোকজনের সমস্যা।  অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এই সংকটের সমাধান সহজও নয়। অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জরুরি মানবিক আশ্রয় দিয়েছে, তাদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়নি। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল এত বড় একটি মানবিক সংকটে প্রতিবেশী দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসবে। বাস্তবে রাখাইনে এত বড় একটি গণহত্যা, এত মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার মতো ঘটনায় বিশ্ব এক অর্থে নীরব। অনেক আলোচনা চলছে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে প্রশ্ন তুলতেই হয়, কোথায় বিশ্ব সম্প্রদায়, কোথায় মানবতা, মানবাধিকার, বিশ্ব আইন। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি উপায় রয়েছে। একটি প্রত্যাবাসন, আরেকটি পুনর্বাসন এবং সর্বশেষ বিকল্প তাদের রিইন্টিগ্রেশন বা বাংলাদেশের সমাজে আত্মস্থ করে নেওয়া। কিন্তু তৃতীয় বিকল্পটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ বাংলাদেশ আয়তনে ছোট কিন্তু অতি জনবহুল দেশ। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য দিন দিন একটি বড় বোঝা হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত নিশ্চিত করার জন্য। প্রত্যাবাসন এবং তাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে পুনর্বাসনই কেবল এ সংকটের সমাধান। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন। সাবেক রাষ্ট্রদূত ফায়েজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের জন্ম দিয়েছে মিয়ানমার। এ সংকটের মাধ্যমে সে দেশের কয়েকজন জেনারেল, রাজনৈতিক নেতা এবং বৌদ্ধ নেতা সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু বিপদে ফেলে দিয়েছে পুরো মিয়ানমারকে। এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে এবং এ জন্য রোহিঙ্গাদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে নিতেই হবে। ছোট আকারে হলেও রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরাটা শুরু করতে হবে। তাদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়াটা খুব জরুরি।

About admin

Check Also

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা ভোটের মাঠে ১৫৭ ম্যাজিস্ট্রেট

ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ১৫৭ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির …

এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয়

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির …

ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের কঠোর তৎপরতায় মিরপুর রোড় এখন রিক্সা মু্ক্ত,জনমতে স্বস্তি

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ন সড়ক মিরপুর সড়ক। গুরুত্ব বিবেচনায় এটি রাজধানীর অন্যতম প্রধান সড়ক। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *