
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট নিয়োগে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স নির্ধারণে প্রচলিত বিধি-বিধান না মেনে নিজেদের ইচ্ছেমতো এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বিমানের সাবেক এমডি ও সিইও আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদের ভাতিজাও রয়েছে।
গত ২০১৮ সালের এ নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে আবুল মুনীম মোসাদ্দিক আহমেদসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিমানের ফাইট অপারেশন্স বিভাগের পরিচালক ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল, সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) পার্থ কুমার পন্ডিত ও ব্যবস্থাপক (নিয়োগ) ফখরুল হোসেন চৌধুরী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালে ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স নির্ধারণে নির্দিষ্ট সময়সীমা মানা হয়নি। নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে নিয়োগ দিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন আসামিরা। দুর্নীতি জায়েজ করতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধনও করা হয়। এতে ৩০ জন প্রার্থীর শিক্ষা যোগ্যতা শিথিল করা হয়- যা নজিরবিহীন।
এতে আরও বলা হয়, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের ক্ষেত্রে অপারেশন ম্যানুয়াল পার্ট-এ অনুসরণ করা হয়নি। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মানবন্টন ম্যানুয়াল অনুযায়ী না করে মৌখিক পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর রেখে বিশেষ প্রার্থীদের অবৈধ সুবিধা প্রদান ও লিখিত (এমসিকিউতে ২০ নম্বর ও বর্ণনামূলক ১০ নম্বর) পরীক্ষায় গ্রেস প্রদানের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অবৈধভাবে বিমানের ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসামিরা তাদের ওপর ন্যাস্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। গত বছরের ৮ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে নিয়োগ সংক্রান্ত ওই দুর্নীতি সংগঠিত হয়।
সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানে বিমান বাহিনীর ভল্টে রক্ষিত ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার খাতা যাচাই, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন, সংগৃহীত রেকর্ডপত্র ও সাক্ষীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে দুর্নীতির প্রমাণ মেলেছে।
বি-৭৩৭ এবং ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের পাইলট সংকটের প্রেক্ষাপটে, ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের জন্য গত বছরের ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর দু’টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিমানের ওয়েবসাইটে আবেদনের একটি ফরম্যাট প্রার্থীদের জন্য প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে নিয়োগ কমিটি বিমানের প্রচলিত নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি। কমিটির যাচাই করা প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অপারেশন্স ম্যানুয়ালে বর্ণিত শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।