
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, হাওরাঞ্চলে দারিদ্র্যের মূল কারণ অবিচার ও বৈষম্য। কিছু প্রভাবশালী শহরে বসে অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘হাওর উন্নয়নে সমন্বিত প্রয়াস’- প্রতিপাদ্যে ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচি (আইডিপি) এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী সমকালে হাওর নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, আজ ‘হাওর গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। বাস্তবচিত্র এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যাদের নাম ছাপা হয়েছে, সবাই তাদের চেনে। তাদের বেশিরভাগই শহরে থাকে। জেলের মাছ, কৃষকের ধান তারা গিলে খাচ্ছে।
মন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, হাওরের অবিচার সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। গরিবরা না খেয়ে থাকবে- এমন বিশ্বাস তৈরি হয়ে গেছে। এ অবিচার কীভাবে বন্ধ হবে তা আমি জানি না।
হাওর অঞ্চলের স্মৃতি তুলে ধরে এম এ মান্নান বলেন, শৈশবে আমি হাওরের বাইরে কোথাও যাইনি। হাওরে নানা ধরনের মাছ ধরেছি। হাওরে মামাবাড়ি, বাবার বাড়ি। হাওরের সামান্য পানিতে বোয়ালসহ নানা প্রজাতির মাছ চিকচিক করত। এক সময় হাওরের মানুষ উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে খেয়েছে। তখন তো মাছের কমতি ছিল না। অথচ এখন মাছ শেষ হয়ে যাবে বলে জলমহাল ইজারা দেওয়া হচ্ছে। জেলের নামে প্রভাশালীরা জলমহাল ভোগ করে। ইজারাকৃত জলমহালের বাইরে ভাসান পানিতেও জেলেরা মাছ ধরতে পারেন না, তারা ক্ষুধার্ত থাকেন। এখানে অন্যায়কে আইন দিয়ে ন্যায় বানানো হয়েছে।
হাওরে সব অবিচার বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হাওর বদলে দিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরের মানুষদের নিয়ে অনেক চিন্তিত। তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে তিনি কষ্ট পান। হাওরে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
ব্র্যাকের অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জের পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আলী মুহম্মদ ওমর ফারুক, ব্র্যাকের সমন্বিত উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির পরিচালক আন্না মিন্জ, কেয়ার বাংলাদেশের সৌহার্দ্য-৩-এর চিফ অব পার্টি ওয়ালটার মাওয়াসা, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড হেড অব এইড এঞ্জেলা নাউম্যান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান।